দশ দিনের ঝটিকা অভিযানে আফগানের ক্ষমতায় তালেবান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১; সময়: ১০:২৫ অপরাহ্ণ |
দশ দিনের ঝটিকা অভিযানে আফগানের ক্ষমতায় তালেবান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মার্কিন বাহিনীর হাতে উৎখাত হওয়ার দুই দশক পর মাত্র দশ দিনে ঝটিকা অভিযানে আফগানিস্তান দখলে নিয়ে তালেবান বাহিনী রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ার পর ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়া চলছে। তালেবান বাহিনী বলেছে, কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে নয়, তারা সরাসরি ক্ষমতা বুঝে নিতে চায়।

রোববার প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে কাবুল ত্যাগ করার পর তালেবানের দুই কর্মকর্তার বরাতে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তার মিরজাকওয়াল এর আগে বলেছিলেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের’ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা। আর তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে আফগানিস্তানের টোলো নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, আশরাফ গানি পদত্যাগ করে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনায় যুক্ত আফগানিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমাদ জিলালিকে সেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেখা যেতে পারে বলেও খবর দিয়েছিল রয়টার্স।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির দেশত্যাগের খবর আসার পর তালেবান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন কোনো সরকার আফগানিস্তানে হবে না। তালেবান সরাসরি দেশের ক্ষমতা বুঝে নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে ঘোষণা দেন, দুই দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে তার দেশের সেনাবাহিনী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। এরপর মে মাসে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে তালেবান। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে দেশটির অধিকাংশ প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়ে রোববার কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এর মধ্যেই তাদের দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানীর পতনের পর যারা আশ্রয়ের আশায় কাবুলে এসেছিলেন, তারা পড়েছেন নতুন বিপদে। তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে ঢোকার পর এখন সেখান থেকেও মরিয়া হয়ে পালাচ্ছে মানুষ। রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। বহু মানুষ পৌঁছে গেছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সীমান্তে। সঞ্চিত অর্থ তুলে নিতে ব্যাংকে ভিড় করছেন অনেকে।

আফগানিস্তানের এক এমপি বিবিসিকে বলেছেন, “আমি বাসা থেকে দেখতে পাচ্ছি, মানুষজন পালানোর জন্য রাস্তা দিয়ে ছুটছে। জানি না তারা কোথায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। ঘর থেকে পালিয়ে তারা কোন রাস্তা দিয়ে কোথায় যাবে জানে না। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে তারা চলেছে। খুবই হৃদয়বিদারক দৃশ্য।”

পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে রাখায় কাবুল থেকে পালানোর একমাত্র পথ হল কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেই পথে দেশ ছাড়ার আশায় দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটেও অনেকে বিমানবন্দরে পৌঁছাচ্ছেন, কিন্তু সব ফ্লাইট ভর্তি থাকায় তাদের কাবুলেই আটকে থাকতে হচ্ছে।

বিবিসির এক সংবাদিক বলেছেন, শহরে মানুষের মধ্যে নিদারুণ উদ্বেগ আর আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। বহু দোকান, বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু মানুষ বলেছে, জীবনে আর কখনও এতটা উদ্বিগ্ন তারা হননি।

সরকারি বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং চেকপয়েন্টগুলো ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা শহরের বিভিন্ন অংশে ঢুকে পড়েছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিশৃঙ্খলা ও লুটপাট ঠেকাতে’ তারা শহরে প্রবেশ করেছে।

তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, আফগানরা পালিয়ে যাক, তারা তা চান না। বরং তারা চান, নাগরিকরা দেশে থেকে সংঘাত আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সহায়তা করুক। বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম টিভি লাইভে থাকা অবস্থায় তাকে ফোন করেন শাহিন। আফগানদের তিনি আশ্বস্ত করেন, তাদের জীবন এখন ‘নিরাপদ’।

“আফগানিস্তানের মানুষকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, বিশেষ করে কাবুলের বাসিন্দাদের, তাদের সম্পত্তি, জীবন, সবই নিরাপদে থাকবে। কারও ওপর কোনো প্রতিশোধ আমরা নেব না।”

  • 125
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে