বাঘায় মাদক সেবী সন্তানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পরিবারের মানুষ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১; সময়: ৮:০৬ অপরাহ্ণ |
বাঘায় মাদক সেবী সন্তানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পরিবারের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর সামীন্তবর্তী এলাকা বাঘায় মাদকের ব্যপকতা ভয়াবহ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক শ্রেনীর তরুন যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে মাদক সেবন ছড়িয়ে পড়ার ফলে তাদের পরিবার চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিনপার করছেন। এতোমধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের সন্তান এবং স্বামী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করার মধ্য দিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছেন। আবার কেউ-কেউ অভিযোগ দেয়ার জন্য ওসির স্বরনাপূর্ণ হচ্ছেন।

সরেজমিন বৃহস্পতিবার (১৯-আগষ্ট) দুপুরে বাঘা থানা চত্বরে গিয়ে লক্ষ করা গেছে সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেয়া উপজেলার আড়ানী জোতরঘু গ্রামের জামাল উদ্দিন(৬৫) তার মাদক সেবন করা সন্তান আলমঙ্গীর হোসেন জুয়েল(২২)কে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তার বড় সন্তান জুয়েল নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে। এ জন্য তার টাকার প্রয়োজন। টাকা দিতে না পারলে গলায় চাপাতি(ছুরি) ধরে । নিরুপায় হয়ে এর আগে পুলিশের সাহয্য নিয়ে একবার তাকে জেল-হাজাতে রেখে ছিলাম। বর্তমানে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আবারও একই পন্থা অবলম্বন করছে। তাই নিরুপায় হয়ে থানায় এসছি।

এর আগে গত ২৬ জুলাই মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে হিম-শিম খাওয়া এক পরিবার এক সাথে পিতা-পুত্রকে হেরোইন সহ পুলিশে সোপর্দ করেন। ঐ পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের ফারজিদ আরিফিন ওরুফে পারভেজ(১৮) এবং তার পিতা শফিকুল ইসলাম(৫০) প্রথমে ফেন্সিডিল এবং ইয়াবা সেবন করলেও বর্তমানে হেরোইন ছাড়া একদমই চলেনা। এ জন্য পিতা-পুত্র মিলে পরিবারকে অর্থের জন্য মানুষিক ও শারিরিক ভাবে নির্যাতন সহ জমি বিক্রী করার চেষ্ঠায় লিপ্ত হয়েছেন। নিরুপায় হয়ে শফিকুলের স্ত্রী ও তার কন্যা থানায় অভিযোগ করে হোরাইন সহ তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেন।

অপর দিকে গত সপ্তাহে উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের আবুবক্কর এর ছেলে সনেট মাদক সেবনের টাকার জন্য তার পিতাকে নির্যাতন করলে নিরুপায় হয়ে তার পিতা সহ পরিবারের লোকজন পরদিন সকালে হোরোইন ও গাঁজা সহ তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এ বিষয়ে সমাজের সুধীজন এবং অভিজ্ঞা মহলের বক্তব্য, মহামারি করোনা কালিন সময় দির্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলায় মাদকের প্রবনতা বিশেষ করে-ইয়াবা,গাঁজা ,হেরোইন ও ফেন্সিডিল সেবন বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সেবনকারীরা। এদিক থেকে বিজিবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ভুমিকা অনেকটায় রহস্য জনক বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এদিকে বাঘা পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহিনুর আলম জানান, তার পাশের গ্রাম নারায়নপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম(৫০) এর ছেলে শাহাবুল (২২) নিয়োমিত ইয়াবা সেবন করে। এ জন্য সে বাবা-মার কাছে প্রতিনিয়ত টাকার জন্য চাপ দেয়। আর এ টাকা দিতে না পারলে পরিবারের উপর চলে নির্যাতন।

তিনি বলেন, তার পরিবার আমার কাছে আসার কারণে আমি এ বিষয়টি নিয়ে ওসি মহাদ্বয়ের সাথে কথা বলেছি। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আমাকে জানান। আমি ঐ মাদক সেবীকে ধরে এনে ভ্রাম্যমান আদালতে পাঠায়। তাহলে সে কমপক্ষে ৬ মাস কারাগারে থাকবে। আর যদি নিয়মিত মামলায় চালন দেয়া হয় তাহলে খুব শীর্ঘই সে আবার বেরিয়ে আসবে।

এ বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, বাঘা সীমান্ত এলাকা এ কারনে এই অঞ্চলে মাদকের প্রবনতা রয়েছে। তবে ওসি সাহেব মাদকের বিরুদ্ধে আন্তরিক । তিনি মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান করার বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি, যদি এমন কোন খবর পান, কোন জায়গায় নেশার আড্ডা বসছে তাহলে আমাকে স্পটে নিয়ে যাবেন। আমি নিজ চোখে দেখার পরে ঘটনা স্থলে অপরাধীরদর সাজা দেবো।

  • 58
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে