‘ভাইরাসে পুজিহারা’ রাজশাহীর আলু মজুতদাররা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১; সময়: ১১:০৩ অপরাহ্ণ |
‘ভাইরাসে পুজিহারা’ রাজশাহীর আলু মজুতদাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুচরা বাজারে আলুর ভালো দাম থাকলেও দাম কম পাইকারি বাজারে। এতে উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের চেয়ে বস্তাপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু।

এমন পরিস্থিতিতে লাভের আশায় আলু মজুত করে এখন বড় লোকসানের কবলে পড়েছেন আলুচাষি ও মজুতদাররা। কম দামে আলু বিক্রি করায় অনেকেই হারাচ্ছেন পুঁজি। আগামীতে আলু চাষ করবেন কি না এ নিয়েও শঙ্কায় অনেকে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সেভাবে হিমাগারগুলো থেকে আলু বের হয়নি। ফলে আলু বাজারের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, এবার জেলায় জমিতে আলু চাষের হয়েছে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর। এই হিসাবে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। রাজশাহী জেলায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারিভাবে ৩৬টি হিমাগার আছে। এই হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা ৮০ লাখ বস্তা।

আলুর উৎপাদন ও খরচের বিষয়ে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘায় এবার আলু চাষে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর উৎপাদন হয়েছে ৮০ থেকে ১১০ মণ করে। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১২ থেকে ১৩ টাকা।

কৃষকরা জানান, পাইকারি বাজারে বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি। অথচ আলু উৎপাদন, পরিবহণ, শ্রমিক খরচ ও হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ মিলিয়ে কেজিপ্রতি খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি চাষিদের লোকসান ৫ থেকে ৭ টাকা। বস্তাপ্রতি লোকসান দাঁড়াচ্ছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা।

এদিকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে তফাৎ ১০-১২ টাকা। মূলত মধ্যস্বত্তভোগীদের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

মোহনপুর উপজেলার নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মোবারক হোসেন নামের এক কৃষক অভিযোগ করেন, গত বছর আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসন থেকে বারবার দাম কমানোর জন্য এসেছে। দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ বছর তো আমরা দাম পাচ্ছি না। এ বছর কেউ আসে না, কৃষক মরলে কেউ দেখে না।

কৃষক আজাদ ও জনি ইসলাম বলেন, এ বছর ভাবছিলাম আমাদের অনেক লাভ হবে। এখনও লাখ টাকা লোকসান। আগামীতে কিভাবে আলু রোপণ করবো, সেটাই বুজতে পারছি না। পাইকারি বাজার থেকে কিনে খুচরা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছে। তারা লাভবান হচ্ছে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আফাজ নামের কৃষক জানান, ৩শ’ বস্তা আলু রাখছিলাম। এখন বস্তা প্রতি ৩শ’-সাড়ে ৩শ’ টাকা লোকসান হচ্ছে।

রাজশাহীর সফল আলু চাষি ও ব্যবসায়ী মৌগাছী গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, আলু অনেক বেশি উৎপাদন হয়েছে। কোভিড এর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেক আলু হিমাগারগুলোতে মজুত রয়েছে।

একদিকে বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও সরকার যদি চালের সাথে বেশী করে আলু বিতরণ করেন এবং অন্যদিকে আলু বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকতো। না হলে কৃষকও মরবে, ব্যবসায়ী, কোল্ডস্টোরেজ মালিকরাও মরবে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আওয়াল বলেন, বর্তমানে কৃষকরা যে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না। এবারে আলু উৎপাদন মৌসুমে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সেভাবে হিমাগারগুলো থেকে আলু বের হয়নি। সেক্ষেত্রে সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়া আলুর যদি বিকল্প ব্যবহার না বাড়ানো যায়, তবে আলুর দাম পড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্যের সঙ্গে আলুকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করা হয় তাহলে কৃষকদের লোকসান এখনো এড়ানো সম্ভব।’

  • 2.3K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে