শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে নীতি-নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১; সময়: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে নীতি-নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে একযোগে খুলছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শুরুতেই সব শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে শুরু হবে না। ধাপে ধাপে ক্লাসগুলো শুরু হবে। সুনির্দিষ্ট তারিখে স্কুল-কলেজ খোলার পর প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এদিকে আজ রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বসছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। এতে শিক্ষা, কৃষি, তথ্য ও সম্প্রচার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ক্রীড়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা আছে। এছাড়া ৬ জন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে যোগ দেবেন। বৈঠকের পর সব সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, আজকের এই বৈঠক থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কিভাবে চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজ খোলার পর কী কী করণীয় সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ১৫ অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা বলা হলেও খোলার সিদ্ধান্ত আরও এগিয়ে আসতে পারে। এ বিষয়েও আজ সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও খোলার পর দীর্ঘদিনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও অনুসরণ পদ্ধতি প্রণয়ন, এসএসসি-এইচএসসি সমমান পরীক্ষাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করাসহ বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা হবে তা ৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) বিকেল ৩টায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্কুল-কলেজ খোলার পর কী কী করণীয় সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে, সেই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছি। বৈঠকে আমরা তা উপস্থাপন করব। এসব পরিকল্পনা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সব সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে, গত ৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে একযোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া আগের ঘোষণা অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ১২ বছরের ওপরের শিশুদেরও প্রয়োজনে করোনার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেন শিক্ষামন্ত্রী। শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, সুনির্দিষ্ট তারিখে স্কুল-কলেজ খোলার পর প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী যে সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ক্লাস শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে । তবে তা পরিবর্তন হতে পারে, হয়তো বা আরও বেশিদিন ক্লাস নিতে পারবো। এছাড়া এইচএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা স্বশরীরে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এটাই আপাতত লক্ষ্য। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে। আগামীতে নতুন সিলেবাসের রূপরেখা দাঁড় করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ-আলোচনা করে নতুন সিলেবাসটা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান উপমন্ত্রী।

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাখাতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অনলাইনে, অফলাইনে ও টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাসহ সব পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়।

এদিকে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে জাতীয় পরামর্শক কমিটি মতামত দিয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এ হার ১০ শতাংশে নেমেছে। বিষয়টি বিবেচনা করে চলমান ছুটি আর বৃদ্ধি না করে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকবার চেষ্টা করেও এই মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর খোলা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ পর্যন্ত গত ১৭ মাসে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বাড়ানো হয়। করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় সবশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান সাধারণ ছুটি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে