চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপারেশনের পর রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই!
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রসূতি এক মায়ের অপারেশনের পর পেটে দুইটা গজ রেখে সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর গাইনী বিভাগের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভুগি প্রসূতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর এলাকার বাসিন্দা শাহানাজ বেগম (৩০)। ভুক্তভুগি ও তার আত্মীয় স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন।
জানা যায়, পেটে গজ থাকায় ঐ নারী ১৫ দিন অসহ্য ব্যাথা নিয়ে শেষে রাজশাহীতে এসে রামেক হাসপাতালে গাইনী বিভাগের চিকিৎসক দেখান। পরে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান তার পরিবার। সেখানেই ধরা পড়ে পেটের ভেতর থাকা বড় বড় দুইটা গজ।
ঘটনার সূত্রপাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পদ্মা ক্লিনিক নামের একটি বে-সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে গত (৫ সেপ্টেম্বর) ঐ প্রসূতি মায়ের অপারেশন করা হয়। গাইনী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুখসানা পারভীন অপারেশন করেন।
ভুক্তভুগি ও তার আত্মীয় স্বজনরা অভিযোগ করেন, পেটের মধ্যে দুইটা গজ রেখেই সেলাই করে দেয় ঐ চিকিৎসক। অপারেশেনের পরে ভুক্তভুগি ঐ মায়ের ব্যথা কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রতিদিন যা খাওয়া হয় খাওয়ার পরেই বমি শুরু হয়।
১৫ দিন এভাবে চলার পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে গাইনী বিভাগের চিকিৎসক দেখানো হয়। সেখানেই পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পরে ধরা পড়ে দুইটা গজ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় একটি বে-সরকারি স্বাস্থ্যকেদ্রে ভর্তি করে পুনরায় অপারেশন করা হয়। সেখানেই দুইটা গজ বের করা হয়। বর্তমানে রোগী সেখানেই চিকিৎসারত রয়েছেন।
এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ঐ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানালে চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের সাথে বিষয়টি সমঝোতার জন্য অনুরোধ করেন।
বিষয়টি নিয়ে নিজেই কথা বলেন ভুক্তভুগী শাহানাজ। তিনি জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর এলাকার পদ্মা ক্লিনিকে আমার অপারেশন করে ডা. রুখসানা পারভীন। এর পরে থেকেই ৬ সেপ্টেম্বর থেকে পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়। ১৫ দিন কিছু খাওয়ার সাথে সাথে বমি হয়ে যায়।
তিনি জানান, এর পরে রাজশাহী এসে চিকিৎসককে দেখায়। পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার পরে গজ থাকায় বিষয়ে জানতে পারি। দ্রুত অপারেশন করে গজ বের করতে বলেন চিকিৎসক। অপারেশনের পরের দিন ডা. রুখসানা পারভীন আমাদের কাছে এসেছিলেন।
তিনি জানিয়েছেন অপারেশনের শেষ মুহুর্তে তিনি একটু ব্যস্ত ছিলেন। পরে নার্সকে সেলাই করতে বলেন। নার্স এই ভুল করবে তিনি বুঝতে পারেননি। ঐ ডাক্তার আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কোথাও কোন অভিযোগ যেন না করি সে বিষয়ে অনুরোধ করেছেন। দরকার হলে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ভুক্তভুগির ভাগ্নে সুমন জানান, অপারেশন করার পর থেকেই খালার অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো। পরে রাজশাহী এনে চিকিৎসক দেখানো হয়। পেটে গজ থাকায় চিকিৎসক দ্রুত অপারেশন করতে বলেন। এখন খালা ভালো আছে। তবে এর বিচার হওয়া দরকার।
তিনি জানান, ভুল সেবায় যদি খালার কিছু হয়ে যেত তখন কে দায় নিতো ? ডা. রুখসানা পারভীন আমাদের কাছে এসে তার ভুলটি স্বীকার করেছেন। আর এ বিষয়ে যেন কাউকে না বলি তা বলে গেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভুগি ভর্তিরত নগরীর ঐ ক্লিনিকের চিকিৎসক ও দায়িত্বরত কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। ফোনে কথা হয় অভিযুক্ত চিকিৎসক অব্স এন্ড গাইনী সরকারি অধ্যাপক ডা. রুখসানা পারভীনের সাথে তিনি জানান, চাঁপাইনবাগঞ্জ সদরের পদ্মা ক্লিনিকে ভুক্তভুগি শাহানাজের অপারেশন আমি করেছি।
তবে তার পেটে গজ ছিলো এমনটি জানা নেই। কোন পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য গজের ভুল তথ্য দিতে পারে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরে ঐ নারীর পেটের ভেতরে গজের ভুল ছবি দিতে পারে।
ঐ রোগীকে আবার কেন অপারেশন করা হলো? তিনি জানান, বিষয়টি শুনেছি তাই আমি গিয়ে ঐ রোগীর সাথে দেখা করে এসেছি।