মান্দার সেই ফার্মাসিস্টও অবসরে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১; সময়: ৬:১৮ অপরাহ্ণ |
মান্দার সেই ফার্মাসিস্টও অবসরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : পদ আছে কিন্তু লোকবল নেই। ফার্মাসিস্ট মকবুল হোসেনকে দিয়েই এতদিন চালিয়ে নেওয়া হচ্ছিল চিকিৎসাসেবার কাজ। আগামিকাল বুধবার তিনিও অবসরে যাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে আর কাউকে পদায়ন করা হয়নি। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এ চিত্রটি নওগাঁর মান্দা উপজেলা সদর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের।

এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ফার্মাসিস্ট মকবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৯০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। আগত রোগীদের নাম-ঠিকানা এন্ট্রি, রোগের বর্ণনা, স্লিপ লেখাসহ ওধুষ সবই এক হাতে করতে হয় তাঁকে। একই সঙ্গে সকালে এসে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা খুলে পুরো এলাকা ঝাঁড়ু দেন।

তিনি আরও বলেন, এভাবে দেড় দশক ধরে একই কর্মস্থলে কাজ করছি। আগামিকাল বুধবার আমি অবসরে যাব।

স্থানীয়রা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ইউনিয়নের দোসতি, কালিকাপুর, ঘাটকৈর, আঁয়াপুর, খাগড়াসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৫ হাজার লোক চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। ডাক্তারসহ অন্যান্য পদে লোকবল না থাকলেও ফার্মাসিস্ট মকবুল হোসেন একাই সকল দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও বুধবার অবসরে যাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মান্দা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন নার্স ও একজন এমএলএসএস’র পদ রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক সৌরভ চক্রবর্তীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন ও এমএলএসএস আফজাল হোসেন ২০১৮ সালের জুনে অবসরে যান। অন্য পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুন্য রয়েছে।
সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গিয়ে রোগীর জটলা দেখা গেছে। এসময় কথা হয় ঘাটকৈর গ্রামের গৃহবধূ গোলাপী বেগমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, তাঁর আট মাস বয়সী শিশু রিয়াদ হোসেন জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত। ছেলের চিকিৎসাসহ ওষুধ নিতে সকালে এখানে আসেন। প্রায় দুঘন্টা অপেক্ষার পর ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।

বাড়িতে দুপুরের রান্না বসিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ নিতে এসেছিলেন রমিছা বেগম নামে এক গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘সামান্য অসুখ-বিসুখে হাতের কাছেই চিকিৎসাসহ ওষুধ দুটোই পাওয়া যায়। ছোটখাটো অসুখে তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয় না। হাতের কাছে চিকিৎসা পাওয়ায় তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু একমাত্র লোক চলে গেলে আমরা চিকিৎসা কীভাবে পাব।

আঁয়াপুর গ্রাম থেকে আসা রোগী আবু বাক্কার মোল্লা জানান, শরীর দুর্বল হওয়ায় কোন কিছু ভালো লাগছে না। তাই হাতের কাজ ঠেলে ওষুধ নিতে এসেছেন। বুধবার থেকে ডাক্তার থাকবেন না শুনে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, করোনা মহামারীর সময়ে কোভিট ইউনিট চালুর পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তাঁকে মৌখিক নিদের্শনায় মান্দা হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। একইভাবে নিদের্শনা দেওয়া হলে তিনি আবারো স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দায়িত্ব পালন করবেন।

মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার রায় বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লোকবল সংকটের কথা জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে আমার করার কিছুই নেই।

তিনি আরও বলেন, মান্দা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মকবুল হোসেন আগামিকাল বুধবার অবসরে যাবেন। এর মধ্যেই সেখানে একজন ফার্মাসিস্টকে নিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সেখানে যোগদান করবেন।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে