চলনবিলে বেড়েছে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১; সময়: ৭:০১ অপরাহ্ণ |
চলনবিলে বেড়েছে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য

নূর ইসলাম রোমান, তাড়াশ : চলনবিলে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দিন রাত অবাধে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিধন করে চলেছেন শিকারিরা। সচেতন মহল বলছেন, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই বলে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় প্রতিবছর এই মৌসুমে।

মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ও বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া ও কাজিপুর গ্রাম এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ থেকে রাতের আঁধারে কাদা খোঁচা, রাত চোরা, শালিকসহ অতিথি পাখি শিকার করেছেন পাখি শিকারিরা।

এদিকে তাড়াশের সীমান্তবর্তী নিমগাছি বাজারে পাখি বিক্রির সময় শতাধিক বক পাখি অবমুক্ত করেছেন রায়গঞ্জ থানা পুলিশ।

রায়গঞ্জ থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক আসিফ আল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে তিনজন পাখি শিকারি ফাঁদ পেতে বক পাখি শিকার করে নিমগাছি বাজারে নিয়ে আসেন। এরপর স্থানীয় রেজাউল করিম নামে একজন পরিবেশবাদী ব্যক্তি পুলিশে খবর দেয়। তারপর জনসম্মুখে পাখিগুলো অবমুক্ত করা হয়। পাখি শিকারিরা আগেই পালিয়ে যায়। পরে শিকারিদের পাখি ধরা ফাঁদগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন পাখি শিকারি বলেন, চলনবিল থেকে পানি নামার সময় ফাঁকা মাঠের খেতে ও ডোবা, নালা, খালে পুঁটি, দারকিনা, খলসেসহ প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ ও পোকা মাকড় পাওয়া যায়। সেসব খাবারের লোভে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি চলনবিলে আসে। কারেন্ট জাল ও বিভিন্ন ফাঁদ পেতে তারা পাখি শিকার করেন।

স্থানীয় ‘স্বাধীন জীবন’ নামে একটি জীব বৈচিত্র্য প্রকৃতি সংরক্ষণ কাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাছিম বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট পাখিদের অবাধ বিচরণের জন্য সারাদেশে যথারীতি ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এরপরও নির্মমভাবে পাখি শিকার করা হচ্ছে।’

বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারিদের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত করাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক জহির আকন্দ বলেন, এখনই আইনের প্রয়োগ করতে চাচ্ছি না। কারণ পাখি বাঁচাতে জনসচেতনতাই মুখ্য। সেজন্য গত দেড় বছর ধরে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সাথে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলনবিল অঞ্চলের বেশ কিছু সংখ্যক মানুষজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাতে পাখি শিকার আগের তুলনায় কমেছে। এরপরও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণি পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে