বাগমারার কথিত জীনের বাদশা গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১; সময়: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ |
বাগমারার কথিত জীনের বাদশা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : প্রায় তিন আগে মাঝ রাতে মোবাইল ফোনে বেজে উঠল কল। ঘুমের ঘরেই মোবাইল রিসিভ করতেই সালাম দিয়ে নিজেকে জীনের বাদশার পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করে। অসহায়ের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে তার আগমন জানিয়ে দিলেন কথিত সেই জীনের বাদশা। ভাঙ্গা কন্ঠে রাতের পর রাত হয়ে আসছিল কথা। স্বাভাবিক ভাবেই মোবাইল রিসিভ করে কথা বলছিলেন আফসার আলী। তাকে বাবা ডাকতে হবে বলেও জানিয়ে দিলেন। তাদের মধ্যে যে কথা হয় সেগুলো যেন অন্য কেউ না জানে। জানলে তার ভাগ্যে ভালো কিছু আর হবে না। সেই সাথে তার দুই সন্তানের অনেক ব্যাধি সহ সমস্যা হবে বলেও বলেন জীনের সেই কথিত বাদশা। তার সকল কথা শোনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আফসার আলীর জানাগেছে।

এরই মধ্যে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে আফসার আলীর বড় ভাই ওমর আলী। মেডিকেলে চিকিৎসাও করিয়েছেন বেশ কিছু দিন। অবশেষে অসুস্থ অবস্থাতেই বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওমর আলীর অসুস্থ হওয়ার খবরও জানেন কথিত সেই জীনের বাদশা। একদিন রাতে ফোন করে হুমকী প্রদান করেন জীনের বাদশা। বলে তোরা যদি আমার নিকট থেকে এগুলো গ্রহণ না করিস তাহলে তুর বড় ভাই ওমর আলী তিন দিনের মধ্যে মারা যাবে। বিধাতার নির্মম লিখন তিন দিনের মধ্যেই মারা গেলেন অসুস্থ সেই ওমর আলী। “প্রচলিত আছে ঝড়ে বক পড়ে ফকিরের কেরামতি বাড়ে”। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কানাইশহর গ্রামে।

ওমর আলী মৃত্যুর পর থেকেই ঘটনাটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। জীনের সেই বাদশা তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে। প্রথমে আফসার আলীকে বলে আমরা যেখানে থাকি সেই মসজিদে একটা যায়নামাজ দান করতে হবে। তুরাতো পারবিনা তাহলে একটা বিকাশ নম্বরে যায়নামাজ কিনতে যে কয় টাকা লাগবে সেই টাকা বিকাশ করতে। এর মধ্যে দিয়ে শুরু অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল। এরপর বিভিন্ন ভাবে দিনের পর দিন ৪টি নম্বরে ২ লাখ ২২ হাজার টাকা গ্রহণ করে চক্রটি। তবুও থামেনি কথিত জীনের বাদশার অর্থ আদায়। সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে নিয়েছেন সব কিছু। টাকা দেয়া হয়ে গেলে আফসার আলী বলে আমাকে আমার জিনিস দিয়ে দাও। সে সময় জীনের বাদশা হুমকী দেয় যে তুই যদি আমাদেরকে সাড়ে তিন ভরি সোনার গহনা দিস তাহলে তুর নামে যেগুলো আছে সেগুলো তুকে দেয়া হবে। আর না দিলে বড় ভাই ওমর আলীর মতো তুর ছেলে-মেয়ের অসুস্থ হয়ে পড়বে।

পিতার স্নেহের কাছে পরাজিত হয়েছে সোনার গহনা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জীনের বাদশাই রাস্তা বলে দেয় যে কামারপাড়া মোড়ে গিয়ে সোনার গহনা নিয়ে থাকবি। সেখানে গিয়ে মানুষের বেশে আমার এক সহযোগী তুর কাছ থেকে সোনার গহনা নিবে। সেই কথা মতো মেয়ের সহ স্ত্রীর সোনার গহনা পৌঁছে দিয়ে আসে আফসার আলী। তাতেও মন ভরে নি ওই জীনের বাদশার। আফসার আলীকে যে জিনিস দেয়া হবে সেটা তুলতে অনেক খরচ। তাই তাদের কাছে আরো টাকা দাবী করা হয়। এর আগে সোনার গহনা দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেন আফসার আলী। তার স্ত্রী বলেন কাকে সোনার গহনা দিয়ে আসলেন। তখন সে কোন কথা বলতে পারেনি। কাউকে কিছু বললেই ছেলে-মেয়ের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ভয়ে। টাকা আর গহনা নেয়ার পর আবারও টাকা দাবী করে জীনের বাদশা।

সে সময় আফসার আলীর বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। তখন মোবাইলে বলে যে বসতবাড়ি বিক্রি করেই টাকা দিতে হবে। তখনও জীনের বাদশার পরিচয় জানেন না আফসার আলী। এ সময়ে বিষয়টি আঁচ করতে পারে আফসার আলীর স্ত্রী। ভাবে তাদেরকে কেউ সর্বসান্ত করছে। বিষয়টা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে প্রতিবেশিরা জানতে বিষয়টি। সে থেকে আর জীনের বাদশাকে টাকা দেননি তারা। এমন প্রতারণার ঘটনায় জীনের বাদশার বিরুদ্ধে প্রথমে বাগমারা থানা পরে রাজশাহী ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন আফসার আলী। অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার রাতে ডিবির সহযোগিতায় বাগমারা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে কথিত সেই জীনের বাদশা জামিরুল ইসলাম (৩৫) কে। গ্রেপ্তারকৃত কথিত জীনের বাদশা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্তকালীপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত জামিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রোববার রাতেই আফসার আলী বাদী হয়ে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।

আফসার আলী বলেন, প্রতারণা করে তাদেরকে সর্বশান্ত করা হয়েছে। প্রতারণাকারীর যেন দৃষ্টমূলক শাস্তি হয় সেই দাবী করেন। সেই সাথে তার নিকট থেকে যে অর্থ এবং নগদ টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলো যেন উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, জীনের বাদশা সেজে দীর্ঘদিন থেকে জামিরুল ইসলাম সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতেন। প্রতারণার অভিযোগের কথিত সেই জীনের বাদশা জামিরুল ইসলামকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজাতে পাঠানো হয়েছে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে