শিক্ষকদের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে গোদাগাড়ী সরকারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২১; সময়: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ |
শিক্ষকদের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে গোদাগাড়ী সরকারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

মুক্তার হোসেন, গোদাগাড়ী : শিক্ষকদের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সরকারী কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ দ্বন্ধের জের ধরে ২১ অক্টোবর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হককে মারধর করে কয়েকজন শিক্ষক। এর আগে ২০১৮ সালের ১৯ আগষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) আব্দুর রহমানকে মারধর করেন তারা। এই দুইটি ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কলেজের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হান্নান।

জানা গেছে, দুই অধ্যক্ষকে মারধরের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। তবে ২০১৬ সালে আব্দুল হান্নান আওয়ামী লীগে যোগদান করে। অন্যরা এখনো বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, দুর্নীতির মামলায় জেল হাজতে ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান। জামিনে মুক্ত হলেও ফৌজদারী মামলার কারণে অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু ফৌজদারী মামলার থাকার পরেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ উমরুল হক।

অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে মারধরের ঘটনায় উমরুল হকসহ ১১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলায় আদালত গ্রেপ্তারী পরোনায়ার পরের দিন মুচলেকা দিয়ে জামিন পান। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে মামলার খরচ চালানো নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উমরুল হককে মারধর ও অধ্যক্ষের কক্ষের আসবাবপত্র ভাংচুর করে তার পক্ষের শিক্ষকরা।

এদিকে, কয়েকজন শিক্ষকের অরাজকতা সৃষ্টি ও শিক্ষকদের দলাদলিতে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকরা কলেজে আসলেও নিয়মিত ক্লাসে যান না।

এছাড়াও ইতিহাস, প্রাণী বিদ্যা ও ইসলামের ইতিহাসে বিভাগের শিক্ষকরা অবসরে চলে গেছেন। এই তিনটি বিভাগে শিক্ষক না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়েছে। এতে করে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

গোদাগাড়ী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ (সাময়িক বরখাস্ত) আব্দুর রহমান বলেন, কলেজের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হান্নানসহ কয়েকজন শিক্ষক। এই সব শিক্ষকের বির্তাকিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদ ও তাদের বিপক্ষে যাওয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার (আব্দুর রহমান) উপর হামলা চালিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, নতুন করে তারা অধ্যক্ষর কক্ষের আসবাবপত্র ভাংচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর উমরুল হককে মারধর করে পরিকল্পিতভাবে সাধারন কিছু শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছড়াও ফৌজদারী মামলার কারণে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও একই মামলার আসামী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হকসহ ১১ জন শিক্ষক এখনো বরখাস্ত হয়নি।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফৌজদারী মামলার আসামীরা বরখাস্ত হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হকের উপর হামলার সঙ্গে জড়িদের নাম না জানিয়ে বলেন, স্বাক্ষাতে দেখা করে সবকিছুই সাংবাদিকদের জানানো হবে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ১২ জন আসামী করে একটি অভিযোগ দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এজাহারে তালিকায় থাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২১ অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে ছুটি নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়।

দুপুর ২টায় কলেজ ছুটি হওয়ায় সাধারন শিক্ষকরা কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক ও তার পক্ষের শিক্ষক অর্থাৎ অধ্যক্ষকে মারধরের মামলার আসামীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর রুমে বসে আড্ডা দেয়। ২১ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর রুমে বসেছিল কলেজের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হান্নানসহ কয়েকজন শিক্ষক।

তারাই নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে সাধারন শিক্ষকদের মামলায় জড়ানো হচ্ছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ও গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার কলেজে অরাজকতা সৃষ্টি ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার সঙ্গে জড়িত গুটি কয়েক শিক্ষক দায়ী।

এসব শিক্ষকরা চাইনা গোদাগাড়ী সরকারী কলেজের সাধারন শিক্ষকদের সরকারীকরণ হোক। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে গোদাগাড়ী কলেজে সরকারী করণে বাধাগ্রস্থ হবে। যে সব শিক্ষক বাধা সৃষ্টি করছে ঐসব শিক্ষক সরকারী করণে আওতায় আসবে না। তবে কলেজের এই পরিস্থিতি চলতে দেবে না গোদাগাড়ী নাগরিক সমাজ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে