আড়ানী পৌরসভায় নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২১; সময়: ৬:১৩ অপরাহ্ণ |
আড়ানী পৌরসভায় নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভায় নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ ও গাড়ী না থাকা সত্বেও তেল কিনে আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার মেয়র মো. মুক্তার আলী ও সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে যার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগের বিধান অমান্য করে দুজন অস্তিত্বহীন ব্যক্তির নামে প্রায় ৯ লাখ টাকা মেয়র উত্তোলন করেছেন। অন্যদিকে, পৌরসভার নিজস্ব কোনো জিপ গাড়ি নেই এবং এর জন্য কোনো তেলও বরাদ্দ নেই। তবে অন্য যানবাহন আছে। সে ক্ষেত্রে যাচাইয়ে জন্য অ্যানফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিনের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম পৌরসভায় অভিযান পরিচালনা করেছে ।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা মেয়র ও সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও জিপ গাড়ী না থাকা সত্ত্বেও তেল উত্তোলন বাবদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

এ সময় দুদক টিম বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করে। সব প্রকল্পের তালিকা, বরাদ্দের নথি ও ব্যয় রেজিস্ট্রারের কপি দ্রুত সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রাথমিক অনুসন্ধানে সহকারী প্রকৌশলীর বেশকিছু সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে দুদক টিমের কাছেও প্রতীয়মান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের সুপারিশসহ কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার মেয়র মো. মুক্তার আলী স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর শাখার ছাড়পত্র প্রাপ্ত নিয়মে একজন স্টোর কিপার, সহকারী কর আদায়কারী তিন জন, লাইসেন্স পরিদর্শক একজন, সুপারভাইজার পদে দুজন, বিদ্যুৎ মিস্ত্রী ও হেলপার পদে দুজন, রোড রোলার ও ট্রাক চালক পদে দুজন ও অফিস সহায়ক পদে দুজনসহ মোট ১৩ জন কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়।

এসব পদে নিয়োগ দিতে বিধি লঙ্ঘন করে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুল ইসলামকে নিয়োাগ কমিটির সদস্য সচিব করেন এবং প্রতিটি পদে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে বিধিবর্হিভূতভাবে উক্ত ১৩টি পদে নিয়োাগ দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মেয়র ও প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়ও মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগের বিধান অমান্য করে দুজন অস্তিত্বহীন ব্যক্তির নামে প্রায় ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন মেয়র।

নির্বাচিত মেয়র মুক্তার আলীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে জেল হাজতে আছেন মুক্তার আলী। সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম অন্যত্র বদলি হয়েছেন। পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কার্তিক চন্দ্র হালদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন দুদুকের অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই আড়ানী পৌরবাজারে মনোয়ার হোসেন মঞ্জু নামের এক কলেজ শিক্ষককে মারধর করেন মেয়র মুক্তার। ওই রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক মামলা করেন। পরে রাত ৩টার দিকে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৯৪ লাখ টাকা, সই করা চেক, আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার করে।

৯ জুলাই ভোরে পাবনার পাকশী এলাকা থেকে মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার টাকা, মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

এসব ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১২ জুলাই মেয়র মুক্তার আলীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে