‘এমনটা হতো না যদি সুমী আমার কাছে থাকতো’

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১; সময়: ১০:০৫ অপরাহ্ণ |
‘এমনটা হতো না যদি সুমী আমার কাছে থাকতো’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে এক প্রবাসীর বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকাল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের কামতলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের প্রবাসী জয়েন উদ্দীনের বাড়ি থেকে তার মা জামেলা বেগম (৫৬), স্ত্রী সুমী আক্তার (২৬) ও শাহজালাল (২৮) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি, রেঞ্জ ও হাঁতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া মরদেহ উদ্ধার হওয়া বসতঘরের দেয়ালে দেখা যায় রক্ত দিয়ে লেখা কিছু কথা। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘এমনটা হতো না যদি আমার সুমী আমার কাছে থাকতো, এই সবকিছুর জন্য সুমীর বাবা দায়ী’।

জয়েন উদ্দিনের চাচাতো ভাই চান মাহমুদ জানান, প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের স্ত্রী সুমী তার বৃদ্ধ শাশুড়ি ও সন্তান সাফীকে নিয়ে আলাদা এক বাড়িতে থাকতেন। শনিবার সকাল ৮টা বেজে গেলেও ওই বাড়ির কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে খোঁজ নিতে যান তিনি। সেখানে গিয়ে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। পরে বিকল্প অন্য একটি দরজা ভেঙে তিনিসহ তার অন্য এক চাচা সিলিং বেয়ে ঘরে প্রবেশ করেন।

সেখানে তিনি খাটের ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় সুমী ও শাহজালালের লাশ ও মেঝেতে জামেলা বেগমের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খাটের অন্যপাশে সুমীর ছেলে সাফীকে মাথা থেঁতলানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশু সাফীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তার স্বজনরা।

জয়েন উদ্দিনের চাচা নজরুল ইসলাম ও মামা জামের আলী জানান, জয়েন উদ্দিনের বাবা হযরত আলী মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। জয়েন উদ্দিনরা দুই ভাই। ছোট ভাইয়ের নাম জয়নাল। দু’জনই সৌদি প্রবাসী। অপরদিকে একই গ্রামের সুমী শিশু বয়সে তার বাবা মাকে হারান। লালিত-পালিত হন একই গ্রামের জিন্নত আলীর কাছে। আট বছর আগে জয়েন দেশে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে সুমীকে। ৮ বছরের সংসার জীবনে চার বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে তাদের।

প্রায় দেড় বছর আগে সুমীর ফুফাতো বোন সিজারীয়ান অপরেশনের জন্য কালিহাতী হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে যাওয়া আসার সুবাদে সুমীর পরিচয় হয় ওই হাসপাতালে ঝাড়ুদার শাহজালাল ওরফে সোহাগের সঙ্গে। এরপর শাহজালালের সঙ্গে সুমীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শাহজালাল কখনও ঝালমুড়ি বিক্রি, কখনও ঝাড়ুদারের কাজ আবার কখনও দিনমজুরের কাজ করতেন। তিনি কালিহাতী উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে।

প্রেমের সম্পর্কের পাঁচ মসের মাথায় স্বামী, সন্তান, সংসার সব রেখে শাহজালালকে বিয়ে করেন সুমী। সেখানে প্রায় চার মাস সংসার করেন। এরপর দেশে ফেরেন জয়েন উদ্দিন। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমীকে পুরনায় ঘরে ফিরিয়ে তিনি। ছুটি শেষে মাস তিনেক আগে আবার সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। এরপর সুমীর আবারও যোগাযোগ হয় শাহজালালের সঙ্গে। শুক্রবার রাতে কোনো এক সময় শাহজালাল আসেন সুমীর বাড়িতে। সুমী ও তার শাশুড়ির সঙ্গে লাশ হয়ে পড়ে থাকেন শাহজালালও।

ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩ টাঙ্গাইল এর কোম্পানি কমান্ডার লে. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, স্থানীয়দের কাছে থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- পরকীয়া প্রেমের জেরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, আলামত বলছে এটি অবশ্যই হত্যাকাণ্ড। হত্যার রহস্য উম্মোচনের জন্য আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, সিআইডির ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ শুরু করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, রেঞ্জ ও হাঁতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। দেয়ালে যেসব লেখা রয়েছে সেটি কার হাতের লেখা তা মিলিয়ে দেখা হবে। সর্বপরি সব আলামত সংগ্রহ করে বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে।

এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঘাটাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইয়াসমিন, টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের একটি টিম, সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা এবং ঘাটাইল দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে