এখনো ছাপা শেষ হয়নি মাধ্যমিকের ৭ কোটি বই
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র ১৫ দিন বাকি। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে বিনা মূল্যের মোট পৌনে ২৫ কোটি বইয়ের মধ্যে ৭ কোটির মতো বই এখনো ছাপার কাজই শেষ হয়নি। আর প্রাথমিকের প্রায় ১৫ শতাংশ বই ছাপার কাজ বাকি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্রগুলোই বলছে, সামান্য কিছু বাদে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার কাজ শেষ করা গেলেও মাধ্যমিকের দুই থেকে তিন কোটি বই ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে না।
এ অবস্থায় আগামী জানুয়ারির প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেছেন, তিনি মনে করেন, নতুন বছরের বই ছাপার কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সব শিক্ষার্থীকেই বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে সরকার।
এনসিটিবির সূত্রমতে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ১০ কোটি।
এনসিটিবির সূত্রমতে, ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ১৭ কোটি ৯১ লাখ বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। তবে ছাপার পর আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে উপজেলা পর্যায়ে বই গেছে প্রায় ১২ লাখ ৯৮ লাখ বই। ওই সূত্রমতে, এখনো প্রায় ৭ কোটি বই ছাপার কাজ বাকি।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এবার বই ছাপার কাজে পুনঃ দরপত্র দিতে হয়েছিল। এরপর আবার বই ছাপার অনুমোদনসংক্রান্ত কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় এক মাস দেরি করে। এর ফলে ছাপার কাজ শুরু করতেই দেরি হয়ে যায়। বিপুল বই ছাপার শেষ সময়ই নির্ধারিত আছে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এ জন্য তাঁরা মনে করছেন, দুই থেকে তিন কোটি বই হয়তো ডিসেম্বরে শেষ হবে না। এসব বই ছাপার কাজ হয়তো জানুয়ারিতে গিয়ে শেষ হবে।
বই ছাপার কাজে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিকে ১৫৮টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ করছে। কিন্তু ১৭টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান কিছুদিন আগে পর্যন্তও বই ছাপার কাজ শুরুই করতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে প্রায় তিন কোটি বই আছে। এই বই নিয়েই মূলত শঙ্কা বেশি করা হচ্ছে।
এবার প্রাথমিকে ৩৭টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পেয়েছে। এই স্তরের মোট প্রায় ১০ কোটি বইয়ের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে উপজেলা পর্যায়ে বই গেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকের একটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে তাঁরা বেকায়দায় আছেন।
বই ছাপার কাজে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, এই প্রতিষ্ঠানটি ২৫ লাখের বেশি বই ছাপার কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আছে ২১ লাখ ১১ হাজারের বেশি। আর প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই আছে ৩ লাখ ৮১ হাজারের মতো।
এখন এই প্রতিষ্ঠানকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যদি তারা ঠিক সময়ে বই দিতে না পারে, তাহলে আপত্কালীন মজুত থেকে বই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ছাপার কাজ না হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে মুদ্রণকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল খান বলেন, এবার বই ছাপার কাজে একাধিকবার পুনঃ দরপত্র এবং এনসিটিবির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাবেই মূলত এই সংকট তৈরি হয়েছে।
কারণ, এবার ছাপার কার্যাদেশ দিতেই দেরি হয়েছে। আবার কিছু মুদ্রণকারীকে সামর্থ্যের বাইরে কাজ দেওয়া হয়েছে। তারপরও আগেভাগে বই দেওয়ার জন্য মুদ্রণকারীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সূত্র- প্রথম আলো