রাজশাহীতে বিজয়ের দুইদিন পর উড়েছিলো পতাকা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১; সময়: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীতে বিজয়ের দুইদিন পর উড়েছিলো পতাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে উদিত হয়েছিল নতুন সূর্য।

দীর্ঘ নয় নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকহানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে। কিন্তু সেদিন রাজশাহীর আকাশে উড়েনি বিজয়ের পতাকা। বিজয়ের দুইদিন পর উড়েছিলো স্বাধীন দেশের পতাকা।

১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় রাজশাহী। হানাদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করলেও রাজশাহীতে রাজাকারদের আধিপত্য ছিলো। বেতারে আসা আত্মসমর্পণের খবরকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়ে দাঙা বাঁধানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে রাজাকারেরা।

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যুদ্ধও চলতে থাকে। দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী শত্রুমুক্ত হয়েছিল। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা এমন তথ্যই জানিয়েছেন।

বিজয়ের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ঢুকেছিল সাতজন মুক্তিযোদ্ধার একটি টিম। এই টিমে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমরা রাজশাহী পৌঁছে যাই। রাতে রাজশাহী কলেজের কলা ভবনে থাকি। ১৬ ডিসেম্বর বোয়ালিয়া ক্লাব, সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা হল, উপশহরের বেশকিছু ক্যাম্পে অভিযান চালান মুক্তিযোদ্ধারা।’

তিনি বলেন, ‘আত্মসমর্পণের খবরকে ‘গুজব’ বলে রাজশাহীতে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছিল রাজাকাররা। তবে সেদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানে জোহা হলে আটকে রাখা সবাই মুক্ত হয়ে যান।

১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী শত্রুমুক্ত হতে থাকে। ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী শত্রুমুক্ত হয়।’মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন রাজশাহী ৪ নম্বর সাব-সেক্টরের গেরিলা লিডার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান রাজা।

তিনি জানান, ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের খবরের পরই মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ রাজশাহীর রাজপথে নেমে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মেতে ওঠেন।

১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকতে থাকেন। তবে তখনও পাকহানাদার বাহিনী রাজশাহী ছেড়ে যেতে পারেনি। ফলে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকে। দু’একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানি ক্যাম্পগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

১৭ ডিসেম্বর অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরে পৌঁছে যান। এরপর ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দীন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাজশাহীকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।

সেদিন হাজার হাজার মানুষ ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে সমবেত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে