চারঘাটে ৬ ইউপিতে আ.লীগের ১১ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১; সময়: ৬:৫১ অপরাহ্ণ |
চারঘাটে ৬ ইউপিতে আ.লীগের ১১ বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী

নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট : আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীর চারঘাটে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। চেয়ারম্যান পদে নৌকার বিরোধীতা করে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী রুপে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী।

অপর দুই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা গোপনে ও প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতায় মেতে উঠেছেন। তবে শেষ সময়েও অনেক চেষ্টার পরেও নৌকার বিরোধীতাদের মাঠ থেকে সরাতে পারেনি সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। এতে তৃনমুল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ অনেকটা স্পষ্ট। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দাবি দলের ভিতরে কোন বিভেদ নেই। যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন তাদের চিহিৃত করে গঠনতন্ত্র মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর চারঘাট উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল অংশ গ্রহন করলেও বিএনপি অংশ গ্রহন থেকে বিরত রয়েছে। তবে দলীয় ভাবে মনোনীত না হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহন করছে বিএনপি সমর্থক হিসেবে প্রার্থীরা।

নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে চেয়ারম্যান পদে ২৩ জন, সাধারন সদস্য পদে ২২৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৮ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন। ৬ টি ইউনিয়ন ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে পুরষ ভোটার ৭০ হাজার ৫০৪ জন এবং নারী ভোটার ৬৯ হাজার ৫৬২ জন।

এদিকে আওয়ামী লীগ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করলেও শেষ পর্যন্ত ৪টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে ভোট যুদ্ধে মাঠে প্রতিদন্দীতা করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিতি ১১ জন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। আর এসব বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ও গোপনে নির্বাচণী মাঠে নৌকার বিরোধীতায় মাঠে রয়েছেন প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। ফলে এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনী মাঠে দৌড়ঝাপ করছেন নৌকার বিরোধীতারা। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ঘুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন চিত্র।

উপজেলা সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দীতা করছেন ৩ জন। এরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক, তার প্রতিপক্ষ হয়ে বিদ্রোহী রুপে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচতি তোতা মিয়া (মোটরসাইকেল) এবং স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে লড়ছেন বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচতি বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক (আনারস)। ভায়ালক্ষিপুরে সরকার দলীয় মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার এবং তার প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচণী মাঠে রয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিনুল হক (আনারস)। নিমপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে নৌকার মাঝি হিসেবে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান, তার প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠ কাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মহিদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) ও আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচতি হাবিবুর রহমান (আনারস) এবং বিএনপির সাবেক ছাত্রদল নেতা মিজানুর রহমান (চশমা)।

শলুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদন্দিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ (নৌকা), প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে রয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল গাফ্ফার হোসেন (আনারস) ও আল্লামা আবুল বাশার রায়হানুল হক দারা (ঘোড়া)। এছাড়াও শলুয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আবুল কালাম আজাদ লড়ছেন (আনারস) প্রতীকে। অপর দিকে বিএনপির হয়ে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জিয়াউল হক মাসুম (মোটরসাইকেল)। ইউসুফপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের টিকেটে চেয়ারম্যান প্রতিদন্দীতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল আলম রতন নৌকা) এবং তার প্রতিপক্ষ হয়ে নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী রুপে মাঠে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মাখন (ঘোড়া)।

অপর দিকে কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক রমজান আলী (মোটরসাইকেল)। সরদহ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসানুজ্জামান মধু (নৌকা)। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান তপন (হাতুড়ী)। তবে সরদহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোন প্রার্থী না থাকলেও প্রকাশ্যে নৌকার বিরোধীতায় মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এ্যাডভোকেট টিপু সুলতান, সরদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাইল হোসেন,সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমান, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আশরাফুজ্জামান, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদক আয়নাল হক, ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রবিউল ইসলাম এবং ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাজাহান আলী।

এ দিকে নির্বাচণী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে অন্য দলের প্রার্থীরা তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী এখন মাঠ গরমে রেখেছেন। কেন্দ্র থেকে নৌকার বিরোধতিাদের তালিকা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনা দিলেও চারঘাটে নৌকার বিরোধীতায় মেতে উঠেছেন অনেকেই। এতে দলের মধ্যে বিভেদ অনকটা স্পষ্ট। এতে করে দলের তৃনমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চরম হতাশায় রয়েছেন বলে জানান অনেকেই।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন। তারা মুলত সুবিধাবাদী। আর এসব সুবিধাবাদিদের দলে কোন ঠাই হবে না। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদে যারা নৌকার বিরোধীতা করছেন তারা ইতিপুর্বে উপজেলা নির্বাচনেও নৌকার বিরোধীতায় মেতে ছিলেন।

তবে তাদের বিরোধীতায় নৌকার পরাজয় ঘটেনি। নৌকার বিজয় হয়েছে। আগামীতেও উপজেলার ৬টি ইউনিয়নেই বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে যারা দলে থেকে নৌকার বিরোধীতায় মেতেছেন তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, আগামী ২৬ ডিসেম্বর ৬টি ইউনিয়নে ৬০ টি ভোট কেন্দ্রে ৪১৩ টি বুথের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে