চলনবিলে বিলুপ্তির পথে ধান রাখা ‘গোলা ঘর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২; সময়: ২:০৪ অপরাহ্ণ |
চলনবিলে বিলুপ্তির পথে ধান রাখা ‘গোলা ঘর

এস,এম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর : চলনবিলাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে এক সময় সম্ভ্রাšত কৃষকের উঠোনে উঠোনে শোভা পেতো ধান রাখা ‘গোলা ঘর। এখন সেটা বিলুপ্তির পথে। ‘গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু’আবহমান বাংলার কাব্যিক চরন। যা বর্তমানে প্রবাদ বচন। পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনো কেউ কেউ বাড়ির উঠানে এই গোলা ঘর রেখে দিয়েছেন।

চলনবিলের গ্রাম-গঞ্জের অবস্থা সম্পন্ন কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষনের জন্য বাড়ির উঠোনের এক কোনে একটু উঁচু জায়গায় গোলা ঘর স্থাপন করতেন। যাদের জমির পরিমাণ একটু বেশি তারা ধানসহ অন্যান্য ফসলাদী সংরক্ষণের জন্য এই গোলা ঘর ব্যবহার করতেন। বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী গোল আকৃতির কাঠামোই গোলা। গোলা ঘর কৃতির কাঠামোতে এঁটেল মাটির মন্ড তৈরি করে ভেতরে সে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে তার উপরে পিরামিড আকৃতির টিনের চালা দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হতো এই গোলা ঘর। ছোট বড় মানভেদে এসব গোলায় ১০০ থেকে ৩০০ মণ ফসল সংরক্ষণ করে রাখতেন। চলনবিলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল প্রথমে রোদে ভালো ভাবে শুকিয়ে গোলায় সংরক্ষন করতেন। এই গোলা ঘর টিকিয়ে রাখতে সরকারী সহযোগীতার দাবী কৃষি সচেতন মহলের।

গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের রাবারড্রাম এলাকার কৃষক মোঃ হাসান আলী বলেন, এক সময় মাঠ ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু,আর গোলা ভরা ধান গ্রামের সম্ভ্রান্ত গৃস্থ্যের পরিচয় বহন করতো। সভ্যতার বিবর্তন আর আধুনিক কৃষি সংরক্ষন পদ্ধতি আবিস্কারের ফলে হারাতে বসেছে গেরস্থ্যের ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। আমরা পুর্বপুরষদের ব্যবহৃত সেই ধানের গোলা ঘরটি এখনও স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে রেখে দিয়েছি।

আব্দুলপুর সরকারী কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাসেম আলী জানান, সত্তর-আশির দশকের দিকে এই সব ধানের গোলা ঘর কৃষক ও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলো। করন এই গোলায় কৃষি ফসল সংরক্ষনে টেকসই হওয়া সাধারন মানুষ এটাকে সাদরে গ্রহন করছেন। আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোলা ঘরটি স্মৃতি হিসাবে এখনো টিকিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে প্রযুক্তির দৌড়ে টিকতে না পেরে গোলা ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। তবে দেশের বিলুপ্ত প্রায় গোলা ঘর টিকিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগের এগিয়ে আসা দরকার।

গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর গ্রামের কৃষক মোঃ আহাদ আলী বলেন, আশি-নব্বই দশকের দিকে একটা গোলা তৈরীতে খরচ হতো ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন এই পেশাটিও হরিয়ে গেছে। এখন চট বা পলিথিনের বস্তায় ভরে কোন সময় প্লাষ্টিকের ড্রামে ভরে ফসলাদি সংরক্ষন করা হয়।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.হারুনর রশীদ বলেন, বর্তমান সময়ে কৃষকদের আবাদি ও বসবাসের জমির পরিমান অনেক কমে গেছে। তাছাড়া গোলা তৈরিতে জায়গা বেশি লাগে, গোলাকে বায়ুরোধী রাখতে না পারা, গোলা নির্মান ও সঙরক্ষন খরচ বেশি, পোকা ও রোগের আক্রমণের সম্ভবনা থাকার কারনে ধানের গোলা এখন গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের কাছে ঐতিহ্য হারাতে বসা কৃষকের গোলার স্থান দখলে নিয়েছে আধুনিক গুদাম ঘর। সেখানে কৃষকের উৎপাদিত শত শত মন ফসল সংরক্ষন করা সম্ভব হচ্ছে। এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে বাঁশের চাটায়ে তৈরী ডোল বা গোলা ঘর।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে