পত্নীতলার জাফেরণ বেওয়া বাঁচতে চান
মাসুদ রানা, পত্নীতলা : পত্নীতলার জাফেরন বেওয়া, ষাটোর্ধ বয়সী এই অসহায় নারী জীবন সায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েও জীবনকে যেন চিনতে হচ্ছে নতুন করেই। গত ১২ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। তার আদি নিবাস পত্নীতলা উপজেলার গোপীনগর এলাকার সোনাডাঙ্গা মোড় এলাকায়।
তখন স্বামী-সন্তান নিয়ে দিনগুলি মোটামুটি ভালোই কাটতো তাদের। কিন্তু একসময় ভাগ্য বিড়ম্বনা হয়ে নেমে আসে জাফেরনের জীবন ঘিরে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে বছর কুড়ি আগে স্থামী শফিরউদ্দীন মারা যান, তার চিকিৎসার জন্য তখন সহায়সম্বল বলে যে সামান্য জমিটুকু ছিলো তার অনেকটাই হারাতে হয়, দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলেকেও হারিয়েছেন বছর দশেক আগে, তখন সন্তানকে বাঁচাতে মরিয়া বিধবা জাফেরণ অবশিষ্ট জমি ও ভিটেমাটিটুকুও বিক্রি করে দেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। এরপর থেকেই বিধবা জফেরনের জীবনে অমানিশার কালো আঁধার নেমে আসে।
বড় ছেলে মা’কে ফেলে আশ্রয় নেন শশুরবাড়িতে। অসহায় বৃদ্ধা জফেরণ তখন ছোটছেলের বিধবা বৌকে সঙ্গে নিয়ে তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরপর পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ এলাকায় ওবায় নামে এক ব্যাক্তির দয়ায় তার পরিত্যাক্ত এক বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাই মেলে জাফেরন ও ছেলে বৌ জোবেদার (৪০)। এরপর এলাকার বিভিন্ন মেস ও বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো স্বামী হারানো দু’টি সংগ্রামী মানুষের জীবন। নজিপুর পৌরসভার তৎকালীন ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদের সহায়তায় একটি বিধবা ভাতার কার্ড হয়। তবে সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার কার্যক্রমে নিজের একটি বাড়ির জন্য পৌরসভা মেয়রের মাধ্যমে আবেদন করলেও এখনো সে আশাটুকু অধরাই থেকে গেছে ভাগ্যবিড়ম্বিত এই বৃদ্ধার। অনেক না পাওয়ার মাঝেই ভাগ্য আবারও নতুন করে যেন বেঁকে বসে। মাস দু’য়েক আগে হঠাৎই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন জাফেরণ। পুরোপুরি বিছানাগত হয়ে পড়েন তিনি।
কাজকর্ম তখন থেকেই আর করতে পারেননা, বিধবা ছেলে বৌ ‘ ই আর বিধবা ভাতার অল্প কয়েকটি টাকাই তখন বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল। অর্থাভাবে ঔষধ কিনতে না পারায় দিনদিন অবস্থা খারাপের দিকে যায় এবং গত ১৭ জানুয়ারি ভর্তি হন ৫০ শয্যাবিশিষ্ট পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। হসপিটালে ডাক্তার আর নার্সদের সহায়তায় চিকিৎসা শুরু হলেও হসপিটালে সাপ্লাই না থাকায় অর্থাভাবে অনেক ঔষধই বাইরে থেকে ক্রয় করা এখন দুঃসাধ্য হয়ে ঠেকেছে অসহায় বৃদ্ধা জাফেরণের পক্ষে। এমন অবস্থায় হসপিটালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে যেন মৃত্যুরই প্রহর গুণছেন তিনি।
অথচ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হলে আবারও সুস্থ্য হয়ে উঠতে সক্ষম হবেন জফেরন এমনটাই জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এই প্রতিবেদক-কে বাঁচার জন্য সে আকুতিই জানাচ্ছিলেন যেন স্বামী-সন্তান হারা সহায়-সম্বলহীন এই বৃদ্ধা।
এজন্য সমাজের বিত্তবান ও সুহৃদ মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তার আকুল আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: জাফেরন বেওয়া, ৭ নং বেড, মহিলা ওয়ার্ড, পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পত্নীতলা, নওগাঁ। নগদ একাউন্টঃ ০১৩২১৪৮৭৪০১ – জোবেদা ( জাফেরনের বিধবা ছেলে বৌ )