রাজশাহীতে বাতিল নকশা দিয়েই জোর করে ভবন বানাচ্ছে পপুলার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২; সময়: ২:৫১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে বাতিল নকশা দিয়েই জোর করে ভবন বানাচ্ছে পপুলার

নিজস্ব প্রতিবেদক : নকশা বাতিল হয়েছে এক বছর ১০ মাস আগে। তাও রাজশাহীতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড। পপুলারের নির্মাণাধীন এই ভবনের কারণে আশপাশের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ফাটল ধরে হেলে পড়ায় একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলার কাজ চলছে।

রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভবনের ১২ তলা পর্যন্ত উঠে গেছে। নকশা বাতিলের বিরুদ্ধে পপুলার কর্তৃপক্ষ আপিল করলে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু শ্রমিকেরা ভবনটিতে প্রতিদিনই কাজ করছেন।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) শোর পাইলিং করে ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন করেছিল। কিন্তু পপুলার তা অমান্য করে সীট পাইলিং করেছে। এর ফলে নির্মাণাধীন ভবনটির পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে অবস্থিত হোটেল সেঞ্চুরী, চৌরঙ্গী জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা এবং ঈমান হোটেলে অসংখ্য ফাটল দেখা দেয়। চৌরঙ্গী জামে মসজিদ হেলে পড়ে হোটেল সেঞ্চুরীর ওপর।

এ নিয়ে অভিযোগ পেয়ে আরডিএ একাধিকবার চিঠি দিয়ে নকশা লঙ্ঘন করে কাজ না করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পপুলার কাজ থামায়নি। ফলে আরডিএ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে এ ব্যাপারে তদন্ত করে। কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে আরডিএ’র ইমারত নির্মাণ কমিটির ৬৯তম সভায় পপুলার ভবনের নকশা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এক চিঠিতে পপুলার কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। সে সময় শুধু পাইল পর্যন্তই হয়েছিল। ওই চিঠিতে বর্ষা মৌসুম শেষে খনন করা স্থানটি বালু দিয়ে ভরাট করে দেওয়ার জন্যও পপুলারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে পপুলার এসব নির্দেশের কিছুই মানেনি। বরং, আরও দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরডিএ’র চিঠিতে বলা হয়েছিল, নকশা লঙ্ঘন করে পপুলারের ভবনের জন্য ৬ মিটার গভীর করে মাটি খনন করা হয়েছে। এতে আশপাশের ভবনগুলো চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র লক্ষ্মীপুরে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ক্ষেত্রে যেকোনো সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে এবং এতে ব্যাপক প্রাণহানিসহ রানা প্লাজার মত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। পাশের ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচতলা ভবনটি ভাঙার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই ভবনেই ছিল মসজিদ ও মাদ্রাসা।

হোটেল সেঞ্চুরীর অন্যতম মালিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘শুনেছি ক্ষতিপূরণ দিয়ে পপুলার কর্তৃপক্ষই মসজিদ ভাঙ্গাচ্ছে। তবে আমাদের সঙ্গে এখনও কোন কথা হয়নি। আমাদের ভবনটা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।’

লক্ষ্মীপুর চৌরাঙ্গী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ডা. ইকবাল বারী বলেন, ‘মসজিদ ভবনে ফাটল ধরা এবং হেলে পড়ার কারণে আমরা এবং পপুলার কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দল এনে পরীক্ষা করিয়েছি।

তাঁরা ভবনটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙ্গে ফেলার পরামর্শ দেন। তখন পপুলার কর্তৃপক্ষ ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চায়। এতে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তাও পপুলারের সঙ্গে আমরা পারব না বলে মেনে নিয়েছি। পপুলার ইতোমধ্যে এক কোটি টাকার মত দিয়েছে। বাকিটা পর্যায়ক্রমে দেবে। মসজিদ ভেঙ্গে আমরা আবার নতুন করে নির্মাণ করব।’

নকশা বাতিল হলেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পপুলারের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক ফরিদ মো. শামীম বলেন, ‘আমাদের সব ঠিক আছে। নকশা বহির্ভুত কাজ চালিয়ে গেলে আরডিএ আমাদের ধরবে। আরডিএ ধরে না কেন?।’

আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা নকশা বাতিল করেছি। তারপর পপুলার আবার আপিল করলে মন্ত্রণালয় একজন উপসচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করেছে। সেই কমিটির তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত চলা অবস্থায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা না, সেটা আইনসম্মতও না।’

তিনি বলেন, ‘পপুলার নতুন করে নকশা পেতে আবেদন করেছে। কিন্তু যেহেতু এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কাজ করছে, তাই আমরা দিতে পারিনি। এ অবস্থায় কাজ চালিয়ে গেলে সেটা নিশ্চয় তদন্ত কমিটি বিবেচনায় নেবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে