শিবগঞ্জে ক্যান্সারে আক্রান্ত ২ সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২; সময়: ৬:২৩ অপরাহ্ণ |
শিবগঞ্জে ক্যান্সারে আক্রান্ত ২ সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি

আতিক ইসলাম সিকো, শিবগঞ্জ : দীর্ঘ ১৩ বছর আগে বিয়ে করেন চঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার সুকচাঁন আলী। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে সন্তান সামিউল। কিন্তু ৫ বছর না যেতেই ক্যান্সার ধরে পড়ে সামিউলের। পরে আরও দুই সন্তান জন্ম নিলে তারাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

দুই সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এরই মধ্যে জায়গা-জমি বিক্রি করে প্রায় নিঃস্ব তাদের পরিবার। এরইমধ্যে মারা গেছে প্রথম সন্তান। বাকি দুজনের একজন সুস্থ হলেও অপরজনকে বাঁচাতে প্রয়োজন দুই লাখ টাকা। সুকচাঁন আলী শিবগঞ্জ পৌর এলাকার বড়চক দৌলতপুরের বাসিন্দা। সুকচাঁন আলী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, কর্মহীন। কাঁধে ছিল পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানোর দায়িত্ব।

কিন্তু একে একে তিন ছেলের ক্যান্সারের খরচ চালতে গিয়ে জায়গা-জমি বিক্রি করে এখন দিশেহারা আমি। তিনি বলেন, প্রথম ছেলে সামিউলকে বাঁচাতে পারিনি। পরে আলিউল নামে আরও এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু জন্মের কিছুদিন যেতে তারও ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক কষ্টে তাকে চিকিৎসা করে ভালো করে তুলেছি। এরপর আড়াই বছর আগে আরেক সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম শাহিদ। সম্প্রতি তারও ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এখন চিকিৎসকরা বলছেন- তার দুটি চোঁখ ওঠাতে হবে। এতে খরচ হবে প্রায় দুই লাখ টাকা। কিন্তু আমি কোথায় পাব এতো টাকা। এখন চিকিৎসার অভাবে প্রায় প্রাণ হারাতে বসেছে আমার শাহিদ।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আশপাশের মানুষের সহযোগিতা নিয়েও সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে শেষ সম্বল ভিটেটুকু বিক্রি করেছি। এখন অন্যের জায়গায় আমবাগানে ঠাঁই নিয়েছি। সুকচাঁনের স্ত্রী রীমা বেগম বলেন, এর আগে এক সন্তানকে হারিয়েছি। এখন ফুটফুটে আড়াই বছরের ছোট সন্তানটিরও দুই চোখেই ধরা পড়েছে ক্যান্সার। দ্রুত চোখ তুলে না ফেললে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। এখন আমি কী করবো, কোথায় যাবো, এই ভেবে দিশেহারা হয়ে গেছি।

সুকচাঁনের প্রতিবেশী দুলাল আলী বলেন, তার প্রথম সন্তানটি মারা গেছে। আর দ্বিতীয়টিকে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে ভালো করেছে। কিন্তু এখন তৃতীয় সন্তানও ক্যান্সারে আক্রান্ত। শিবগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন আলী বলেন, সুকচাঁন আলী আসলেই একজন অসহায় ব্যক্তি। এর আগে সামান্য কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। তার ছেলের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় পৌরসভার পক্ষ থেকে তা বহন করা সম্ভব নয়। তবে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস জানান, সম্প্রতি তাদের ২ জনকে শিবগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি ও শিক্ষাভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ, ফেইজ-২ এর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের প্রয়োজন ও যথার্থতার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, খবর পাওয়ার পর সুকচাঁনের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছি। এছাড়া ভূমিহীন সুকচাঁন আলীকে দ্রুত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে সেমি পাকা ঘর দেওয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে