এ কেমন নিষ্ঠুরতা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২; সময়: ১১:৫১ অপরাহ্ণ |
এ কেমন নিষ্ঠুরতা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সিলেট কোতোয়ালি থানায় বুধবার বিকেলে কান্না করছিলেন নাজমিন জাহান নামের এক নারী। আর বলছিলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে মারছি, বালিশ চাপা দিয়ে আমি আমার মেয়েকে মারছি, আমি ফাঁসিতে ঝুলব।’

নাজমিন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাদেপাশা গ্রামের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের জিয়া উদ্দিনের মেয়ে। বাবা-বোন, দুই সন্তানসহ থাকেন সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া নিপোবন আবাসিক এলাকায়।

পুলিশ জানায়, দুপুরের দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালের পুলিশ বক্স থেকে শিশুটির বাবা, মা ও নানাকে কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়। পরে নাজমিনের কথা শুনে তাঁকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বামী।

নাজমিন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তার স্বামী সাব্বির হোসেন এক বছর পাঁচ মাস বয়সী শিশু সাবিহা হোসেনকে দেখতে না আসায় ক্ষোভে বালিশ চাপা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে সময় শিশুটি মারা যায়নি। বাসার মালিকসহ প্রতিবেশীরা শিশুটিকে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার সময় বমি করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওই নারী আরও বলেন, ২০১৫ সালে বিয়ের পর তাঁর স্বামী কাতারে চলে যান। চার বছর পর দেশে ফেরেন। এত দিন স্বামীর কাছ থেকে কোনো ভরণপোষণ পাননি। ২০১৯ সালে স্বামী দেশে থাকার সময় তিনি সন্তানসম্ভবা হন। পরবর্তী সময়ে স্বামী আবার দেশের বাইরে চলে যান। সম্প্রতি দেশে ফেরার পর স্বামী শিশুসন্তানকে দেখতেও আসেননি। নাজমিনের ধারণা, তাঁর স্বামীর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।

সাব্বিরের দাবি, তাঁর স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে থাকতে চান না, আলাদাভাবে থাকতে চান। স্ত্রী আগের স্বামীর ঘরের সন্তানসহ বাবা-বোনের সঙ্গে থাকেন। বুধবার বেলা একটার দিকে জাফলং যাওয়ার পথে সাব্বির খবর পান—মেয়ে অসুস্থ, হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে যান। হাসপাতালে যাওয়ার পর স্ত্রী তাঁর কাছে স্বীকার করেন মেয়েকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছেন।

ইচ্ছা করেই স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন না বলে জানালেন সাব্বির। বললেন, তার স্ত্রী যৌথ পরিবারে থাকতে চান না। মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার তাকে চিকিৎসকও দেখানো হয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বললেও তা মানেননি।

মেয়ের বাবা জিয়া উদ্দিন বলেন, নাজমিন কয়েক দিন ধরে কিছুটা অসুস্থ, বাচ্চাটিও অসুস্থ ছিল। সকালে বাচ্চাটিকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। এ সময় শিশুটিকে কোলে রেখেছিলেন নাজমিন। একপর্যায়ে শিশুটি কান্নাকাটির শব্দ শুনে বাসার মালিকসহ কয়েকজন প্রতিবেশী শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বমি করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিজেই মেয়েকে থানায় নিয়ে এসেছেন বলে জানান জিয়া উদ্দিন।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, নাজমিন মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে আটকও করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিশুটির মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে