পাবনায় পোস্ট মাস্টার ও পিয়নের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২; সময়: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ |
পাবনায় পোস্ট মাস্টার ও পিয়নের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনায় পোস্ট মাস্টার ও পিয়ন গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়েছে । পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এই ঘটনা ঘটায়। তারা পলাতক রয়েছে। নগদ এর নামে এই টাকা জমা করার কথা ছিল। জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে এঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডাক বিভাগ। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে দাবী করেছে।

একাধিক ভুক্তভূগির অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দি ইউনিয়ন পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল যোগসাজসে প্রায় ৩ কেটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। ভুক্তভূগিরা জানান, প্রতারক পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল গ্রাহকদের বলেন, নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি।

এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেবার জন্য পোষ্ট অফিসের পাশাপাশি আর একটি সংস্থা চালু করছেন। যার নাম পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭(৩৪২) ২০০৪। এমনই ভূল ভাল বুঝিয়ে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ঐ এলাকার একাধিক নারী পুরুষের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়।

সাগরকান্দি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি প্রায় দশ বছর ধরে জমানো পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পোস্টম্যান (পিয়ন) আব্দুল্লাহর পরামর্শে তিনি চারমাস আগে নগদের নামে হিসাব খুলে নূর ইসলাম বকুলের কাছে টাকা জমা দেন। চার মাসে তাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে মুনাফাও দিয়েছে। গত সপ্তাহে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে টাকা তুলতে আসেন তিনি। তাকে একদিন পর আসতে বলেন। তিনি বলেন, “নির্ধারিত দিনে এসে জানতে পারি আব্দুল্লাহ বদলি নিয়ে অন্য পোস্ট অফিসে চলে গেছেন। খোঁজ নেই নূর ইসলাম বকুলেরও।”

সাগরকান্দি ্র বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুন্ডু জানান, তিনি দুই মাস আগে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত আট লাখ টাকা জমা রাখতে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে যান। এসময় পোস্টম্যান নূর ইসলাম বকুল ও পোস্টম্যান (পিয়ন) আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকে জানান ডাক বিভাগের নতুন সেবা ‘নগদ’, সেখানে টাকা রাখলে পাওয়া যাবে লাখে এক হাজার টাকার মাসিক মুনাফা। তাদের পরামর্শে নূর ইসলামের হাতে টাকা দিয়ে হিসাব খোলেন প্রদীপ। দেওয়া হয় নগদের নামে ছাপা পাশ বই, হিসাব নম্বর। “এক মাস মুনাফা দেওয়ার পরই তারা লাপাত্তা হয়েছেন।

এছাড়া একই ধরনের ভুক্তভূগি মোছাঃ আলেয়া খাতুন, মোছাঃ বুলু খাতুন, মোঃ খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, মোছাঃ হুলুফা খাতুন, মোঃ মানিক মোল্লা সহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, একেক জনের কাছ থেকে ২লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮লাখ করে টাকা নিয়েছে। তারা আরো বলেন, পোষ্ট অফিসে টাকা রাখার জন্য গেলে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাদের বলে নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি হবে। আমরা বকুলের কথা শুনে নগদে টাকা রেখেছি। বিনিময়ে বকুল আমাদের নগদের টোকেন দিয়েছেন।

টোকেনে লেখা আছে পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭(৩৪২)২০০৪। আমরা কিছু দিন পরে পোষ্ট অফিসে টাকা তুলতে গেলে মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আমাদের সাথে নানান তালবাহানা শুরু করেন। টাকা না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। তখন আমরা বিষয়টি স্থানীয় সাগরকান্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরিকে জানালে তিনি পোষ্ট অফিসের পোষ্টম্যানকে পরিষদে ডেকে জিঙ্গাসাবাদ করলে প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে সাগরকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া পোষ্ট অফিসে এবং সাতবাড়িয়া পোষ্ট মাষ্টার রফিকুল ইসলামকে সাগরকান্দি পোষ্ট অফিসে বদলি করা হয়েছে বলে জানতে পেড়েছি। এ বিষয়ে সাগরকান্দী ইউনিয়নের নতুন যোগদানকৃত পোষ্টমাষ্টার রফিকুল ইসলাম প্রতারিত গ্রাহকদের বই হাতে নিয়ে বলেন, এসব বই ডাক বিভাগের না, গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

সুজাানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, কয়েকজন ভুক্তভুগি মৌখিকভাবে জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাবনা ডাক বিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির সদস্য শাহীন জুবায়ের হাসান খান জানান,“পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন নূর ইসলাম গর্হিত অপরাধ করেছেন। তারা নগদের নাম লোগো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।

আমরা সরেজমিনে প্রমাণও পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্যও আমরা চেষ্টা করব।” এ বিষয়ে পাবনা ডাক বিভাগের ডেপুটি পোষ্ট মাষ্টার মোঃ আনোয়ার হোসেন ঘটনা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাগরকান্দি পোষ্ট অফিসের একজন পোস্টম্যান পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ এর মতো করে বই তৈরি করে এক লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেবার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। পোস্ট অফিসের সাথে কুড়িয়ারের এধরণের কোন সম্পর্ক নেই।

বইতে নগদের লোগ দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বদলি করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোন লিখিত অভিযোগ করেননি ভুক্তভূগিরা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া যায়নি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে