প্রযুক্তি ব্যবহারে কৌশল পরিবর্তন করছে জঙ্গিরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২; সময়: ৩:২০ অপরাহ্ণ |
প্রযুক্তি ব্যবহারে কৌশল পরিবর্তন করছে জঙ্গিরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অত্যাধুনিক সাইবার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। তাদের মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সাইবার প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। তারা নবম ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে কাজ করছে।

অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত কিশোর ও তরুণীদের ১০ থেকে ১২ জনের একেকটি সুইসাইডাল স্কোয়াড গঠন করেছে। এসব স্কোয়াডের প্রধান কাজ জঙ্গি সংগঠনগুলোর নির্দেশনা মতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালানো। এমনই একটি স্কোয়াড গত বছর কুমিলস্না কান্ত জিউর মন্দিরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভারতের গুজরাটে চলমান হিজাব আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশেও একই ধরনের আন্দোলনের চেষ্টা করছে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল ও জঙ্গি সংগঠন। গত বছর থেকে হালনাগাদ ৭৭টি মামলায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও মিলেছে এমন তথ্য।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের জঙ্গিবাদ এখন প্রায় শতভাগই প্রযুক্তিনির্ভর। তারা বিভিন্ন গোপন অ্যাপস ব্যবহার করে। করোনা সংক্রমণের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এমন সুযোগে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রযুক্তিকেন্দ্রিক নানা অ্যাপস ব্যবহার করছে।

এসব অ্যাপসেই জঙ্গিরা ফাঁদ পেতে রেখেছে। তারা বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্টে নানা ইসলামি পোস্ট দিচ্ছে। যারা বার বার এসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে তাদের মধ্যে থেকেই যাচাই-বাছাই করে টার্গেট করছে জঙ্গিরা। টার্গেটের মধ্যে রয়েছে নবম ও দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

দেশের অন্যতম একটি প্রধান ইসলামি দলের কৌশলের আদলেই জঙ্গিরা কাজটি করছে। এসব বিষয়ে এটিইউ-এর বিশেষ পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে মাদ্রাসায় শিক্ষকতার আড়ালে জেএমবির কার্যক্রম চালানো শীর্ষ জেএমবি নেতা দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার দাওয়াহ বিভাগের প্রধান হাফেজ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলামের (৩৮) নাম।

তাকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে রাজধানীর গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দিনাজপুরের খানাসামা থানাধীন মন্ডলের বাজার কুমুড়িয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজখানার হাফেজ এবং শিক্ষক। শিক্ষকতার আড়ালে তিনি দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার জেএমবি’র সদস্য সংগ্রহ করছিলেন।

এসব বিষয়ে জানতে এটিইউ-এর অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত বছর থেকে হালনাগাদ আমরা জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি মামলার তদন্ত করেছি। মামলার আসামি হিসেবে শতাধিক জঙ্গির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে দেশের জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত নানা তথ্য।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ এখন প্রায় শতভাগই প্রযুক্তিনির্ভর। জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত আনসারুলস্নাহ বাংলা টিম (এবিটি), আনসার আল ইসলাম, জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নতুন ও পুরাতন গ্রম্নপ এবং আলস্নাহর দল। তারা দেশের একটি অন্যতম প্রধান দলের কৌশল বা নির্দেশনা মোতাবেক নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে দলে বেড়াচ্ছে। তারা অ্যাপসভিত্তিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি পুরাতন জেএমবির সিনিয়র সদস্যরা নবম ও দশম শ্রেণির মেধাবী এবং ধর্মভীরু শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছেন। যারা দলে ভিড়ছে তাদের আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করছে। এসব কিশোর ও তরুণ সদস্যকে নানা উছিলায় হিজরত করানো হচ্ছে। অর্থাৎ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পাঠিয়ে তাদের সুরক্ষিত জায়গায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানেই চলছে তাদের চূড়ান্ত মগজ ধোলাইয়ের কাজ।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া এসব কিশোর ও তরুণ সদস্যকে সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে একেকটি সুইসাইডাল স্কোয়াড। স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১২ জনের বেশি নয়।

যেটিকে জঙ্গি সংগঠনগুলো রিজার্ভ ফোর্স নাম দিয়েছে। প্রতিটি স্কোয়াডে রাখা হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ, ওয়াচার বা গোয়েন্দা সদস্য, রেকি করা বা ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করা ও মূল অপারেশন বা নাশকতা চালানোর জন্য চারটি ধাপ। চারটি ধাপ নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করার পর নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, গত বছরের ১৩ অক্টোবর কুমিলস্নার কান্ত জিউর মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে নাশকতা চালানো হয়। কুমিলস্নার ৮টি ছাড়াও চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় মন্দিরে হামলা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় চাঁদপুরে ৫ জন, কুমিলস্নায় ১ জন ও নোয়াখালীতে ২ জন মোট ৮ জনের মৃতু্য হয়।

এসব ঘটনায় সারাদেশে মোট ৭২টি মামলা হয়। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয় ৪৫০ জন। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কুমিলস্নার কান্ত জিউর মন্দিরে হামলার সঙ্গে জঙ্গিদের কিশোর ও তরুণ সদস্যদের নিয়ে গড়ে তোলা একটি সুইসাইডাল স্কোয়াড জড়িত। স্কোয়াডটির বেশ কয়েক জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে সারাদেশে ওই সময় চালানো নাশকতায় অংশ নিয়েছিল জঙ্গিদের কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গঠন করা সুইসাইডাল স্কোয়াডগুলো।

পুলিশের অতিরিক্ত এই উপমহাপরিদর্শক আরও বলেন, ভারতের গুজরাটে হিজাব আন্দোলনের জেরে সেখানকার সব স্কুল, কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ভারতে চলমান হিজাব আন্দোলনকে দেশে আনার চেষ্টা করছে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল ও জঙ্গি সংগঠন। তারা দেশে হিজাব আন্দোলন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক করার দাবিতে তারা সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এমন আন্দোলনে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিদের গঠিত নতুন স্কোয়াড দিয়ে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে। পরিকল্পনার শেকড় অনেক গভীরে। সূত্র- যায়যায়দিন

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে