ইছামতিতে উচ্ছেদ বন্ধ করে পুনঃখনন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২; সময়: ৪:২০ অপরাহ্ণ |
ইছামতিতে উচ্ছেদ বন্ধ করে পুনঃখনন

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : পাবনা শহরকে দু’ভাগ করে প্রবাহিত এক সময়ের প্রমত্ত ইছামতি নদীর দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ স্থগিত রেখেই পুণঃখনন কাজ শুরু করেছে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) । ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ দুই বছরেও উদ্ধার করতে পারে নাই এর অবৈধ স্থাপনা।

গত বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর কাজ বন্ধ ছিল প্রায় ১১ মাস। উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বন্ধ আছে আইনী জটিলতায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে অংশে উচ্ছেদ সম্পন্ন হয়েছে সেখানে খনন কাজ চলছে। এই উদ্ধারকৃত নদীতে বার বার খননে অর্থে অপচয় ছাড়া কোনই সুফল আসবে না বলেই মনে করেন স্থানীয়রা । তবে কতৃপক্ষ বলেন কোভিড পরিস্থিতি এবং আইনী জটিলতায় এই দীর্ঘ সূত্রিতা।

পাবনার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, সত্তর দশকেও ইছামতির বিস্তার পাবনা পৌর এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার ছিল । প্রস্থ ছিল ৯০ থেকে ২০০ ফুট। অথচ অব্যাহত দখলে নদীর প্রস্থ কমে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ ফুটে। সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ এলাকা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দখল হয়েছে নদীর দুই তীর।

প্রভাবশালীরা উৎসমুখ ভরাট করে ফেলায় ইছামতি এখন প্রাণহীন বদ্ধ খাল। বদ্ধ জলাশয়ের দূষিত আর নোংরা পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে। নদী দখল করে কেউ গড়েছেন পাকা স্থাপনা। সে সব স্থাপনা কয়েক হাত বদলও হয়েছে। তাদের আবার সকল বৈধ কাগজও আছে বলে তাদের দাবী। অনেকেই মনে করেন কাগজপাতি যাচাই বাছাই করে ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করলে সহজেই এই উদ্ধার অভিযান সফল হবে।

পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন ও স্থানীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ ইছামতি নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং পানি প্রবাহ সচল করতে নদী পুণঃখনন কাজ শুরু করে পাউবো।কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও আইনী জটিলতায় এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান, বর্ষা মৌসুম চলে আসায় স্থগিত করা হয় খনন কাজ। ১১ মাসেও আইনী জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এখন উচ্ছেদ স্থগিত রেখেই খনন কাজ শুরু করেছে পাউবো। মাত্র ৫ শতাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী উদ্ধার প্রকল্পের আওতায় খনন কাজ দেখানো হয়েছে ১৮ শতাংশ। সেখানেই চলছে খননের কাজ।

পাউবো কর্মকর্তারা জানান, ৫দশমিক ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইছামতির ৫দশমিক ৬৭ কিলোমিটার এবং এর উৎসমুখে আরও ২দশমিক ৬৭ কিলোমিটার ড্রেজিং করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি নদীটিকে দখলমুক্ত করার জন্য ২দশমিক ৬৯ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত বছরের ১৫ মার্চ শুরু হয়েছে প্রকল্পগুলোর কাজ। তবে দখলদাররা হাইকোর্টে জমির মালিকানা দাবি করে পাউবোর এ সব প্রকল্প বন্ধ করতে সাতটি পিটিশন দাখিল করে। তাই উদ্ধার কাজ বন্ধ রেখে গত ১৭ জানুয়ারি ১ কিলোমিটার এলাকায় খনন কাজ পুনরায় শুরু হয়।

পাউবোর সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশারফ হোসেন জানান, আমরা ইতিমধ্যে নদীর তীরে ১হাজার ১০০টিরও বেশি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছি, কিন্তু ১ কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র ১০০টি স্থাপনা অপসারণের পর আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে।আদালতের অনুমোদন পাওয়ার আগে আমরা উচ্ছেদ অভিযান এবং ড্রেজিং আবার শুরু করতে পারছি না। তাই উচ্ছেদকৃত অংশে” খনন কাজ চালানো হচ্ছে ।

এদিকে ইছামতি রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এসএম মাহাবুব আলম বলেন, ’নদীর দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে ড্রেজিং অর্থহীন হয়ে পড়বে’।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ খান বলেন, ’নদী রক্ষায় উচ্চ আদালত সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর দুই পারের দখলদার উচ্ছেদ ও খননের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সে অনুযায়ী নদীর কিছু অংশ উচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু গত ৩০ মার্চ বাকি অংশ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর তিন দিন পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আবার জেলাবাসীর মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে উচ্ছেদকৃত অংশে নির্দেশনা অনুযায়ী খনন না করে দায়সারাভাবে খননকাজ চালানো হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই জেলার সচেতন মানুষ মেনে নিতে পারছে না। এছাড়া নদীর পাশে ড্রেজিং করা মাটি স্তুপ করে রাখায় বৃষ্টিতে ধূয়ে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ‘মহামান্য হাইকোর্টের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী ইছামতি নদীর দুই পারের দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করা হবে। খননকৃত মাটি শুকিয়ে গেলে নদী পাড় থেকে মাটি অপসারণ করা হবে। খনন কাজে অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনুসারে খনন এবং উচ্ছেদ কাজ একসাথে চলার কথা। স্থানীয়দের মতে, আগামী জুন মাসে এ প্রকল্পের ২য় দফার বর্ধিত মেয়াদও শেষ হবে। ফেরত যাবে এ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ। এজন্য তরিঘরি করে আবারও শুরু হয়েছে খনন কাজ।তাদের মতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া এ খননে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবেনা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে