শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পরও দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ শাবি শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২; সময়: ১২:৪০ অপরাহ্ণ |
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পরও দীর্ঘসূত্রতায় হতাশ শাবি শিক্ষার্থী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ডু টানা প্রায় ১৫ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর ফিরেছেন সিলেটে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে গত শুক্রবার বিকেলে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া ও মন্ত্রীর আশ্বাসের বিষয়ে সজল কুন্ডু বলেন, আমাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মন্ত্রী একই সঙ্গে বলেছিলেন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে এবং সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের যেসব ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা অচিরেই খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা তোলা বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমি দেখতে পাইনি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা মৃত। অসুস্থ মাকে নিয়ে আমার অসচ্ছল পরিবার। সম্প্রতি ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম। পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি ঘটনায় আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে, যে আশঙ্কায় আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার দায় কে নেবে?

পুলিশি হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে কিছুদিন সিলেটে এবং পরে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ দিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলাম।

এর মধ্যে ডান হাতে একটি অস্ত্রোপচারে হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়। এখনো আমার মাথা, বুক, পেট, পিঠসহ সারা শরীরের বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকেরা পুনরায় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমাকে হয়তো এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে।

আমি জানতে পেরেছি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আমাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, ভবিষ্যতের সব চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার চিকিৎসার খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি।

সজল আরও বলেন, ১৬ জানুয়ারি যে নারকীয় হামলা হয়েছে, তার একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই, আমার কাছে সত্য হচ্ছে আমার শরীরে এখনো বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারগুলো, এত দিনের অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা, আমার আহত সতীর্থদের আর্তনাদ। আমাদের প্রতিটি দাবি মেনে নিয়ে যে কারণে আমাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে, তা থেকে আমাদের মুক্তি দেওয়া হোক। পরিশেষে আমি আন্দোলনকারী সতীর্থদের সঙ্গে সমস্বরে মহামান্য আচার্য ও কর্তৃপক্ষের কাছে এ আবেদনই করতে চাই।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে