রাজশাহী নগরের এই দিঘি ভরাট করছে কে?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২; সময়: ১:৩১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী নগরের এই দিঘি ভরাট করছে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুকুরটির নাম ‘শুকান দিঘি’। তবে পানি থাকে সারা বছর। আশপাশের লোকজন এ পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। নগরের ২২টি পুকুরের সঙ্গে প্রায় তিন একারের বেশি আয়তনের এই শুকান দিঘিও রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে।

এসব পুকুর সংরক্ষণে রাসিকের প্রকল্প রয়েছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাস্টার প্ল্যানেও শুকান দিঘি সংরক্ষিত জলাধার। এছাড়াও নগরীতে পুকুর ভরাট না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও নগরের এই পুকুর ভরাট চলছে।

নগরীর সপুরা এলাকায় অবস্থিত শুকান দিঘি একাধিকবার হাতবদল হয়েছে। তবে বর্তমানে দিঘির প্রকৃত মালিক কে বা কারা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এলাকার অনেকে এটির মালিকানা দাবি করে থাকেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছে। দুই বছর ধরে সংরক্ষিত পুকুরটি একটু একটু করে ভরাট করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নীরব।

জানা যায়, কিছুদিন বিরতি দিয়ে শুক্রবার রাত থেকে শুকান দিঘিতে আবার বালু ফেলার কাজ শুরু হয়। সড়ক বাতি নিভিয়ে সেখানে ট্রাকে করে বালু ফেলা হচ্ছিল। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাট কাজে বাধা দেয়। পুকুরটি সারা রাত পাহারা দিয়ে পুলিশ সকাল ৮টার দিকে চলে আসে। এরপর ভূমিদস্যুরা আবার ভরাটের কাজ শুরু করে। অভিযোগ-পুকুরটি ভরাট করে ৫০ লাখ টাকা কাঠা করে বিক্রির তোড়জোড় চলছে।

শুকান দিঘিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের টাইলসের ওপর দিয়ে ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে পুকুরে ফেলতে। এতে টাইলস ভেঙেচুরে গেছে। পুকুরের উত্তর পাড়ে ফুটপাতে একটি চায়ের দোকান ছিল। কয়েকদিন আগে সেটি গুঁড়িয়ে দিয়ে ট্রাক চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে পুকুরের পূর্ব পাড়ের কিছু জায়গা ভরাট করে কলাগাছ লাগানো হয়। সেখানেও রাতে বালু ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, সোহরাব ও সুমন নামে দুই ব্যক্তি শুক্রবার রাতে ভরাট কাজ শুরু করেন। রাসিকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সোবহান লিটন তাদের সঙ্গে আছেন। কাউন্সিলরের স্ত্রী, ভাই ও ভাতিজা এ পুকুরের কিছুটা অংশের মালিকানা দাবি করে থাকেন।

তবে কাউন্সিলর লিটনের দাবি, পুকুরে তাদের কোনো মালিকানা নেই। তিনি নিজেও পুকুরটি রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা কারণে পেরে উঠছেন না। যারা ভরাট করছেন; তারা প্রভাবশালী।

শুক্রবার রাতে পুকুর ভরাট শুরু হলে হারুন-আর-রশিদ নামের এক ব্যক্তি থানায় খবর দেন। এ পুকুরের মালিকানা যারা অতীতে দাবি করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই করে আসছেন। হারুনের দাবি-এ পুকুর তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এর মালিক তাদের বংশের অন্তত ১২ জন। কিন্তু তারা পুকুরটি ভরাট করছেন না। একজন কাউন্সিলর ও একজন যুবলীগ নেতার সহায়তায় সুমন ও সোহরাব পুকুরটি দখল ও ভরাট করছেন। তারা ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী।

সুমান ও সোহরাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের দুজনের মোবাইল ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, নগরীতে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ। এরপরও একের পর এক পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আর এজন্য পুলিশের ওপর দোষ পড়ছে। অনেকে অভিযোগ করেন-পুলিশ নাকি টাকা খেয়ে পুকুর ভরাটে বাধা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, খবর পেলে শুকান দিঘি তো বটেই অন্য কোনো পুকুরই পুলিশ ভরাট করতে দেবে না।

রাসিকের সচিব মশিউর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকার ২২টি পুকুর সংস্কার করে সংরক্ষণে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় শুকান দিঘিও আছে। পুকুরগুলোর কোনোটি সরকারি আবার কোনোটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। প্রকল্পটি পাশ হলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ব্যক্তি মালিকানার পুকুরও অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু প্রকল্প পাশ না হওয়ায় তারা এ কাজে হাত দিতে পারছেন না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে