রাজশাহীতেও তেল নিয়ে তেলেসমাতি

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২২; সময়: ১২:০০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতেও তেল নিয়ে তেলেসমাতি

এম. আব্দুল বাতেন : লাগাতর ভাবে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সর্বস্তরের জনগণ। বাসা হতে বাজার করতে বের হলেই নিজের চাহিদামত পণ্য ক্রয় করতে পারছে না ক্রেতারা। বিনিময়ে নিজের উপার্জিত প্রায় দ্বিগুন টাকা দিয়ে পণ্য ক্রয় করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। সাধারণ চাকরিজীবি হতে শুরু করে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের দিন চালনায় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় সকল ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও বেশী প্রভাব পড়েছে সয়াবিন তেলে ।

অভিযোগ উঠেছে দেশে পর্যপ্ত তেলের মজুত থাকলেও বিশ্বব্যাপি তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিজেরা গোডাউনে মজুত রেখে বাজারে সরবরাহ করছে না। সারাদেশ ব্যাপি এমন চিত্রে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকারও। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে
এনিয়ে দেশব্যাপি অভিযান অব্যাহত রেখেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রাজশাহী বিভাগীয় ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের দুটি দল গত এক সপ্তাহের অধিক সময় হতে সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তারা রাজশাহী মহানগর হতে শুরু করে উপজেলা ও একেবারে গ্রাম পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে তেলের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশী, মজুত, কৃত্রিম সংকট দেখানো, বোতলের গায়ে লেখা দাম ঘঁষে উঠিয়ে দেওয়াসহ নানান অনিয়মের জন্য জরিমান, দোকান সিলগালা ও সতর্কতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, ক্রেতারা দোকানে তেল ক্রয় করতে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা। আবারও ২ হতে ৩ লিটারের তেল নাই বলেও জানিয়ে দিচ্ছে। এসব তথ্য যায় রাজশাহী ভোক্তা অধিকারের কাছে। তারা নিজেরা ক্রেতা সাজিয়ে দোকানে তেল ক্রয় করতে গেলে তেলের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার জন্য অর্থদন্ডসহ দোকান সিলগালা করে দেয়।

গত ২ মার্চ নগরীর উপ-শহর নিউ মার্কেট এলাকায় মেসার্স এস আলম ট্রেডার্স সয়াবিনতেলের দাম বেশী নেওয়ায় ওই দোকান সিলগালা করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে দোকানমালিক এস আলমকে তাঁদের কার্যালয়ে এসে শুনানিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নগরের সাগরপাড়া এলাকায় রাজশাহী কিচেন বাজার ক্রেতার কাছে সয়াবিন তেল না বিক্রি করে ফিরিয়ে দেন। পরে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, তাঁর দোকানে পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল রয়েছে। এ জন্য দোকান মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঘোষপাড়া এলাকায় রাম স্টোরে তেলের মোড়কে ‘এমআরপি লেখা’ মুছে বেশি দামে বিক্রি করার অপরাধে আট হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার।

গত ১ মার্চ রাজশাহীর নগরীর হড়গ্রাম বাজার এলাকার বকুল স্টোরে অভিযান চালিয়ে মুদি দোকানে খোলাবাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ টিসিবির ৭০টি খালি তেলের বোতল পাওয়া গেছে। ওই বোতলগুলোর তেল লুকিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন দোকানের মালিক। এ ঘটনায় ওই দোকানের মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মুদিদোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর অলিগলির ছোট বড় কোন দোকানে ৫ লিটারের বোতল তেল নেই। যা ছিলো তা আগেই বিক্রি করেছেন। মুদি দোকান ও সুপারস্টার ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য কোম্পানীকে অর্ডার দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আগামীতে তেলের দাম আরো বাড়তে পারে বলে তারা জানান।

হঠাৎ তেলের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে এর লাগাম টেনে ধরার অনুরোধ জানান ক্রেতারা।

জানা যায়, গত ১০ দিনে রাজশাহী ভোক্তা অধিকার জেলার পবা, গোদাগাড়ী, বাগমারাসহ বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চলমান রেখেছে ।

গত ৬ মার্চ ভোক্তা অধিকার রাজশাহী জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক জনাব মাসুম আলী এঁর নেতৃত্বে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় যমুনা ইন্ড্রাস্টিয়াল এগ্রো পার্কে অবস্থিত আমন্ত্রণ ও নেচুরা ব্র‌্যান্ডের সোয়াবিন তেলের কারখানায় এবং রাজবাড়ী হাটে পাইকারি ও খুচরা দোকানে তদারকিমূলক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে যমুনা সয়াবিন তেল কারখানায় বিক্রয় রশিদ ও মজুদ পরিস্থিতি যাচাই করা হয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এছাড়াও অভিযানে রাজাবাড়ী হাটে বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য মুছে ফেলা, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দাম অপেক্ষা অধিক দামে বিক্রয় করা, মূল্য তালিকা না থাকায় মেসার্স প্রিয় স্টোরকে ৩৫ হাজার টাকা এবং মামুন এন্ড ব্রাদার্সকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দাম অপেক্ষা অধিক দামে বিক্রয় করা, মূল্য তালিকা না থাকায় ৭ হাজার টাকা জরিমানা ও সর্তক করা হয়।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ মেনে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ গত ৭ মার্চ মূল্য তালিকায় লেখা সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা লেখা থাকলেও ১৮৫ টাকায় বিক্রি করায় তিন প্রতিষ্ঠানকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা। ৬ মার্চ নগরীর একটি দোকানে ৮০০ লিটার তেল লুকিয়ে রেখে ভোক্তাদের কাছে তেল বিক্রি না করায় কৃত্রিম সংকট তৈরীর অপচেষ্টা করায় একটি দোকানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এছাড়াও বেশী কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, সিলগালাসহ সর্তকর্তা অভিযান পরিচালনা করেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ বলেন, তাঁরা ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন। যেখানে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হবে, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও যারা তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরী করবে তাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ভোক্তাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

এদিকে গত ৭ মার্চ সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে তেলের কৃত্রিম সংকট নিরসনে করণীয় বিষয়ক আলোচনা সভা হয়েছে। সভায় ব্যবসায়ীদের সাথে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মত বিনিময় করে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে