পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হযবরল অবস্থায় সেশনজটের শঙ্কা

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২; সময়: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ |
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হযবরল অবস্থায় সেশনজটের শঙ্কা

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবক হীন। তার উপর প্রায় চার সপ্তাহ (পঁচিশদিন) রেজিস্ট্রার কার্যালয় টানা তালা বদ্ধ। চলছে না কোন রকম দাপ্তরিক কার্যক্রম । ৬ মার্চ উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ দিন আগেই দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য।

তাঁর মেয়াদ কালে সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ ছিল শূন্য। এখনো চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার অপষারণ দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এমন পরিস্থিতিতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবরে পরার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তারাও ঠিকমতো ক্যাম্পাসে আসেন না। বিভাগগুলোতে দু-একটি ছিটেফোটা ক্লাস হলেও এতে দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। এই সপÍাহের মধ্যে ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারী না হলে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হবার আশংকা রয়েছে। সব মিলিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে হযবরল অবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরেজমিনে দেখাগেলো, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। প্রশাসনিক ভবনের অধিকাংশ কার্যালয় বন্ধ। কর্মকর্তাদের অনেকেই কার্যালয়ে নেই। বিভাগগুলোতে গিয়েও একই দৃশ্যের দেখা মেলে। শিক্ষার্থীরা জটলা করে বেড়াচ্ছে। কর্মস্থলে নেই বেশির ভাগ শিক্ষক।

কয়েক শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, গত চার বছরে উপাচার্য এম রোস্তম আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। নিজে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়ে ভাতিজা-ভাগনেদের চাকরি দিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধার করে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। নিজের আখের গোছানোর জন্য মেয়াদ শেষের আগে সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে নিয়োগ দেন নাই এবং দেওয়ার চেষ্টা করেন নাই। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা ঝুলিয়ে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে আছে। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই কেমন যেন স্বাধীন হয়ে গেছেন।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের দিকে কারও নজর নেই। নামমাত্র ক্লাস চললেও পরীক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ আছে। যাদের পরীক্ষা হয়েছে তাদের ফল প্রকাশ হচ্ছেনা। উপাচার্যের অদক্ষতার কারণে এমনিতেই দুই বছরের বেশি সেশনজট তৈরি হয়ে আছে। এভাবে চলতে থাকলে আরও দীর্ঘমেয়াদি জট তৈরি হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সমিরন কুমার সাহা বলেন, পরীক্ষা কার্যক্রম একেবারে চলছে না,এটা ঠিক না। বিভিন্ন বিভাগের স্পোর্টস কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের সংখ্যা ১৯। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সমস্যার সমাধান দ্রুত হওয়া প্রয়োজন।

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, রোস্তম সাহেব ছিলেন একজন পুরোপুরি অদক্ষ উপাচার্য। তিনি একাডেমিক, প্রশাসনিকসহ সব ক্ষেত্রেই জটিলতা তৈরি করে নিজের আখের গুছিয়ে মেয়াদ পূর্তির আগেই পালিয়ে গেছেন। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন মহাসংকটে । সংকট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে হলে এখনই প্রশাসনিক ও একাডেমিক দক্ষ সম্পন্ন উপাচার্য প্রয়োজন।

কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হারুনার রশিদ বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ ১৪মার্চ শেষ হলেও নতুন পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারাই কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তালা বন্ধ থাকবে। নতুন উপাচার্য এলে আলোচনা সাপেক্ষে তালা খোলার সিদ্ধান্ত হবে।

রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) বিজন কুমার ব্রহ্ম জানান, নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। চরম সংকট চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।সব মিলিয়ে সবকিছুতেই কেমন যেন স্থবিরতা নেমে এসেছে। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।’
উল্লেখ্য,গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য এম রোস্তম আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা ডাকেন। সভার ৬১ আলোচ্যসূচির মধ্যে ৪২টিই ছিল নিয়োগসংক্রান্ত।

সভায় ১০২ জনের নিয়োগপ্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতায় শিক্ষক কর্মকর্তাদের চাপে সভা স্থগিত করেন তিনি। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। রিজেন্ট বোর্ড না করায় ক্ষিপ্ত হন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা। নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য। প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পাবনা-১ আসনের সাংসদ ও রিজেন্ট বোর্ড সদস্য শামসুল হক টুকুর মধ্যস্থতায় উপাচার্য মুক্ত হন।

২৪ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার ১৩ দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যে বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর দুদিন পর নীরবে ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। এতে আবারও ক্ষুব্ধ হন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারা। তাঁরা ১৭ দফা দাবি তুলে ২৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। ফলে বিভাগগুলোতে পরীক্ষার ফলাফল ও নতুন পরীক্ষা কার্যক্রম আটকে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গত ৭ মার্চ প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

একদিকে টানা ২৫ দিন রেজিস্ট্রারের কার্যালয় তালা বন্ধ, অন্যদিকে উপাচার্য নেই।এতে একাডেমিক সমস্যা তৈরির পাশাপাশি প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তালা খোলা না হলে এবং নতুন উপাচার্য না নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আটকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে