ইউপি সদস্যদের রাস্তার ফকির বললেন বদলগাছীর ইউএনও

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২; সময়: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ |
ইউপি সদস্যদের রাস্তার ফকির বললেন বদলগাছীর ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের সাথে অশোভন আচরণ করেছেন নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন। একই সঙ্গে তিনি ইউপি সদস্যদের রাস্তার ফকির বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ইউপি সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে ইউএনও এমন মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (২২ মার্চ) স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি) ঢাকা এর আয়োজনে ও বদলগাছী উপজেলা প্রশাসন এর বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সম্পর্কিত অবহিতকরণ কোর্স (২২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ) তিন দিনের কর্মশালা শুরু হয়। এই কর্মশালার ৮টি ইউনিয়নের নারী-পুরুষ মিলে ৯৬ জন ইউপি সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

প্রথম দিনে সকালে একটি খামে মোড়ানো ছোট নাস্তার প্যাকেট প্রদান করেন ইউপি সদস্যদের হাতে হাতে। নাস্তা দিলেও দেননি কোন পানির বোতল। এতে করে ইউপি সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে ইউপি সদস্যরা সবাই একত্রিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের কক্ষের সামনে যায়।

এ সময় বিলাশবাড়ি ইউপি সদস্য হেলাল হোসেনকে প্রতিনিধি করে ইউএনওর কাছে পাঠায়। হেলাল হোসেন কক্ষে প্রবেশ করলে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন সকল ইউপি সদস্যদের রাস্তার ফকির আখ্যায়িত করে অপমানিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেয়।

হেলাল হোসেনবলেন, দুপুরের খাবার বিষয়ে ইউএনওর সাথে কথা বলতে আমরা সকলেই তাঁর অফিস কক্ষের সামনে যায়। সেখানে আমাকে ভিতরে যেতে বলেন সবার প্রতিনিধি হিসেবে। এ সময় ইউএনও আমাদের সাথে অশোভণ আচরন করে সকল ইউপি সদস্যদের ফকির বলে মন্তব্য করে। তিনি আমাদের কোন কথা শুনবো না বলে চলে যেতে বলেন। এ সময় সকল ইউপি সদস্যদের ভাতা আটকে দেয়ারও হুমিকি দেন তিনি।

এ নিয়ে মেম্বারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে মেম্বাররা উপজেলা চত্বরে ইউএনও অফিসের সামনে এবিষয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করলে উপস্থিত মেম্বাররা এ সময় ইউএনও’র অশোভন আচরণের প্রতিাবাদ করতে থাকে।

মেম্বারদের শান্ত করতে ইউএনও কৌশলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু, মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন ও কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপনকে সকল ইউপি সদস্যদের ডেকে পুনরায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন হলরুমে নিয়ে যান।

পরে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম খাঁন উপস্থিত হন। ইউপি সদস্যদের শান্ত করতে ইউএনও ওই হল রুমে পুনরায় আসলে সকল ইউপি সদস্যরা ফকির বলে অপমানিত করার প্রতিবাদ জানান। এবং ইউপি সদস্যরা এই কর্মশালা কোর্স সম্পূর্ণ করবেন না বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ইউএনও তাদেরকে বার বার কৌশলে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু ও মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন ক্ষোভে ফেটে পড়া মেম্বারদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন।

সকল ইউপি সদস্যরা বলেন, ইউএনও আমাদেরকে চরম অপমান করেছেন। আমরা কর্মশালায় আর অংশগ্রহন করবো কিনা আগামীকাল সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। আর আগামীকাল ঢাকা থেকে উদ্ধর্তন এক কর্মকর্তা আসার কথা রয়েছে। ইউএনও আমাদেরকে রাস্তার ফকির বলে অপমানিত করার বিষয়টি আমরা তাঁকে জানাবো।

ইউপি সদস্য হেলাল হোসেন সহ প্রায় অর্ধশত সদস্যরা বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের প্রশিক্ষণ হবে। আজকে বেলা ১ টা ৫ মিনিটে আমাদের বিরতি দিয়েছে। আমরা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে কিনা। তারা কোনও কথা না বলে চলে গেলে পিয়নেরা বলেন, খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা ৯৬ জন মেম্বার এসময় কোনও হোটেলে এক সাথে এতো খাবার পাব না। আর সকালে আমাদেরকে নাস্তা দিলেও পানির কোনও ব্যবস্থা ছিল না।

মেম্বার হেলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের কাছে জানতে গেলে ইউএনও স্যার আমার কোনও কথা না শুনেই বলেন, আপনাদের ( সকল মেম্বারদের) ফকিরের মতো আচরণ। আমি একটি কথা বলতে চাইলে তিনি আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমার উপর রেগে গিয়ে বলেন, আপনাদের ৫ মাসের বেতন আটকানো হবে। আমার কোনও কথাই শোনেনি তিনি।

অপরদিকে ইউপি সদস্যরা ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানালে সাংবাদিকরা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন হলরুমে গিয়ে উত্তেজনার ভিডিও ধারণ করলে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন তার নিরাপত্ত কর্মীদিয়ে সাংবাদিক মুজাহিদকে ডেকে নিয়ে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে ইউএনও নিজেই ভিডিওটি ডিলিট করেন। অনান্য সাংবাদিকদের এসে নিরাপত্তা কর্মী বলেন আপনাদের এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। আপনারা চলে যান বলে সাংবাদিকদের বেড় করে দেন।

মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন জানান, আমি পরে গিয়েছি আগের ঘটনা বলতে পারবো না। তবে গিয়ে দেখি মেম্বাররা সবাই ইউএনও’র সাথে কি যেন কথা বলে বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ইউএনও স্যারসহ মেম্বারদের নিয়ে হলরুমে বসিয়ে ভুল বুঝাবুঝি শেষে সবাইকে ৫শ টাকা করে দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু সাথে কথা বলতে তার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বলেন, ইউপি সদস্যদের কর্মশালায় সকালের নাস্তা দিলেও পানি দেওয়া হয়নি। আবার দুপুরের খাবারের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় মেম্বাররা মন খারাপ করে ইউএনও’র কাছে গেলে তিনি নাকি মেম্বারদের আচরন ফকিরের মতো বলে ইউএনও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে শুনেছি। এই ইউএনও যোগদানের পর থেকে সবার সাথে অশোভন আচরন করে চলেছে। আর এই কর্মশালার বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়নি।

এবিষয়ে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলেন, মেম্বাররা আমার রুমে আসার আগেই চিৎকার করছিলো। তাদেরকে বুঝিয়েছি এরকম করা ঠিক না। কিছু বলার থাকলে এক/দুই জন এসে সমস্যার কথা বলতে পারতো। আপনার সাথে মেম্বার দেখা করে কথা বলতে গেলে আপনি তাদের আচরণ ফকিরের মতো বলে অফিস থেকে বেড় করে দিয়েছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান। এই ইউএনও এর আগেও অনেকে সেবা গ্রহিতা ও চাকুরিজীবিদের সাথে বিভিন্ন সময় অশোভন আচরন করেছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে