রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অশিক্ষকসূলভ আচরণের অভিযোগ

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২২; সময়: ৯:৫৪ অপরাহ্ণ |
রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অশিক্ষকসূলভ আচরণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবেন কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অশিক্ষকসূলভ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। একই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লা আল মামুন চৌধুরী উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে এমন অভিযোগ করেছেন।

তার অভিযোগ, র্দীঘদিন যাবৎ অধ্যাপক সুবেন কুমার অশিক্ষকসূলভ আচরণ করে আসছেন। একই সঙ্গে একাডেমিক কাজে অসহযোগিতা ও কর্তব্যকর্মে অবহেলা এবং তার বিভিন্ন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।  এসবের প্রতিকার চেয়ে রাবি উপাচার্য বরাবর রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ড. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লা আল মামুন চৌধুরী। গত ২২ মার্চ মঙ্গলবার তিনি ৬ পাতার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপাচার্যের দপ্তরে পাঠানো অভিযোগের রিসিভ করা কপি গণমাধ্যম কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ মার্চ বিভাগের চেয়ারম্যানকে গালাগালি করেন অধ্যাপক সুবেন কুমার। ২১ মার্চ সকালে বিভাগের অফিসের আলমারী থেকে ল্যাপটপ বের করার জন্য চাবি পেতে দেরী হওয়ায় চেয়ারম্যানকে বলেন, এই শালা চেয়ারম্যান, আলমারীর চাবি কোথায়? বিভাগ কি তোর বাবার, যে চাবি তোর কাছে রেখেছিস?

লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের (পরীক্ষা-২০২০) বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা কমিটিসমূহ অনুমোদিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু থ্যাইল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পর সুবেন কুমার তিনজন প্রভাষকদের নিয়ে সেই কমিটি পরিবর্তনের জন্য বিভাগের চেয়ারম্যানকে চাপপ্রয়োগ করেন। চেয়ারম্যান বাধ্য হয়ে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একাডেমিক কমিটির সভা আহব্বান করেন।

সভায় সুবেন কুমার চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন এবং তিনজন প্রভাষকের সহায়তায় তা অনুমোদন করে নেন। পরে চতুর্থ বর্ষের ভাইবা পরীক্ষার সময় মুশফিকুর রহমান নামের এক ছাত্রসহ কয়েকজন ছাত্রকে অবমূল্যায়ন করেন। আবার তার পছন্দের ছাত্রকে অতিমূল্যায়ন করেন। অথচ মুশফিকুর রহমান খুব ভালো ভাইবা দেন।

এছাড়াও চতুর্থ বর্ষের অনার্স পরীক্ষার সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশ্লিল আচরণ করেন ওই শিক্ষক। সেই সময় তার পছন্দের ছাত্রকে ৪০ নাম্বারের ভেতরে ৩৯ নাম্বার দিয়েছেন। আবার অন্য ছাত্রকে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করে হয়রানি করেন। অনেক গুলি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সত্তেও মুশফিকুর রহমানকে ভাইবাতে ৪০ নম্বরের মধ্যে সবচে কম ২০ থেকে ২৫ নাম্বার দিয়েছেন। এছাড়া বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি মুলক আচারণ করেন সুবেন কুমার। তার অত্যাচারের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাইনা।

ওই বোর্ডে বহিরাগত কোন পরীক্ষক ছিলেন না। মুশফিকুর রহমানকে অতিরিক্ত কিছু প্রশ্ন করার পরেও সে সঠিক উত্তর দেয়। এসময় সদস্য সৈয়দ আশিকুর রহমান কোন প্রশ্ন করেনি। কিন্তুু ওই সময় সুবেন কুমার তাকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করেন। পরে সুবেন কুমার ওই বোর্ডের সর্ব নিম্ন নাম্বার দেয় মুশফিকুর রহমানকে ।

ছয় পাতার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২০১৯ সালে মাস্টার্স পরীক্ষায় অনার্সে ভালো ফল করার পরেও কতিপয় শিক্ষার্থীর মাস্টার্সে কাঙ্খিত ফল না পাওয়ার কারণ হলো সুবেন কুমার এই ব্যাচের অর্ধেক পরীক্ষার্থীকে কয়েকটি কোর্সের ইনকোর্সে ২০ নাম্বারের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, নাম্বার দিয়েছেন। তার উদ্দেশ্য, রাবির কোন ছাত্র-ছাত্রী যেন এই বিভাগের শিক্ষক হতে না পারে।

শুধু তাই নয়, এই ব্যাচে মাস্টার্সে সোমালিয়ার এক ছাত্র ফারাহ মুনিম গারাদকে সুবেন কুমান ইনকোর্সে শুণ্য দিয়েছে, ফলে সে জিপিএ তিন উঠাতে ব্যর্থ হয়। বিদেশী ছাত্রকে ইনকোর্সে শূণ্য দেয়ায় রাবির ইমেজ নষ্ট হয়েছে। ফারাহ মুনিম গারাদ সোমালিয়ার একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।

এছাড়া সুবেন কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগের কার্যক্রম সম্পাদনে অসহযোগিতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব কাজে সুবেনকে সহায়তা করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান রাবির ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর আবুল কাশেম। তার অধীনে সুবেন কুমারের নিয়োগ হয়।

আব্দুল আল মামুন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদানের পর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা সুবেন কুমারের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন, শ্রেণী কক্ষে পাঠদানের সময় ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে মানসিক নির্যাতন করেন। নানান ধরণের অশ্লিল কথা বলে মানসিক ভাবে দূর্বল করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক-আশাক, পারিবারিক অবস্থান, পিতা-মাতার পেশা প্রভুতি বিষয়ে খারাপ মন্তব্য করেন। কখনও তাদের বেঞ্চের উপরে দাঁড় করে রাখেন।

সুবেন কুমার যাদের পছন্দ করেন না, তাদের পরীক্ষায় নাম্বার কম দেবার হুমকি প্রদান করেন। এমন শিক্ষক রাবিতে থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। সেই সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা লিখা পড়ায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে। রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবেন কুমারকে একাডেমিক থেকে প্রত্যাহার করার আহব্বান জানান অভিযোগের মাধ্যমে বিভাগের চেয়ারম্যান।

এর আগে সুবেন কুমারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তোলেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুশফিকুর রহমানকে। তাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়ে তার ফলাফলে ধস নামিয়ে দিয়েছেন। এ কারনে ওই ছাত্রের অভিভাবক সুবেনের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কিন্তুু সুবেককে সহায়তাকারি রাবির ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর আবুল কাশেমকে তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক করা হয়। গত ২৩ মার্চ ওই ছাত্রের অভিভাবক তদন্ত কমিটির আহব্বায়ক আবুল কাশেমের প্রতি অনাস্থা ও তাকে তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর ফের লিখিত অভিযোগ দেন।

এ বিষয় রাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যানের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে