কঠিন জীবনে গানই তার একমাত্র সম্বল

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২২; সময়: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ |
কঠিন জীবনে গানই তার একমাত্র সম্বল

আরিফুল হক সোহাগ, নওগাঁ : বয়স তার ৭০ এর কোঠায়। পেশায় তিনি একজন ভ্যান চালক। ভ্যানে করে কলা গাছের মগজ এবং এটে বিক্রি করে জীবন যাপন করেন। মাঝে মাঝে ভাড়ায় চালান ভ্যান গাড়ি। এই কঠিন জীবনে গানই তার একমাত্র সম্বল। প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে চলছে সংসার সংগ্রামী জীবন। বলছি নওগাঁর আব্দুস সামাদ উরফে গান সামাদ এর কথা।

১৪ বছর বয়স থেকে বাংলা সিনেমার গানকে ভালোবেসে গেয়ে চলেছেন তিনি। সিনেমা হল, টেলিভিশন, রেডিও ট্যাঞ্জেস্টার এ বাংলা গান শুনে আয়ত্ত্ব করেছেন বহু গান।দরিদ্র পরিবারে সেই সময় লেখাপড়ার সুযোগ না থাকায় নিজেকে গানের মাধ্যমে পরিচিত করার সুযোগ তৈরী হলেও সাড়া দেন নি তখন। বর্তমান সময়ে নিজের গানের গলা ধরে রাখতে চলতে ফিরতে সবসময় চর্চা করে যাচ্ছেন তিনি।

বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী বছির আহমেদ, আব্দুল জব্বার, সৈয়দ আব্দুল হাদি, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাদের গান তার আয়ত্ব করা। আপন মনে ভ্যান গাড়ি চালানোর সময় অথবা অবসার সময়ে নিজে এবং দর্শকদের শুনানোর জন্য গেয়ে থাকেন গান। বাংলা গানকে ভালোবেসে রোমান্টিক, সোলো ধরনের গান তিনি গেয়ে থাকেন।

আব্দুস সামাদ নওগাঁ পৌরসভার অন্তর্গত আরজী নওগাঁ মধ্যপাড়ায় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন। প্রথম স্ত্রীর পক্ষের একটি ছেলে সন্তান থাকলেও দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তার এবং তার পরিবারের কোন খোঁজ নেন না বলে জানান তিনি। গান সামাদ বলেন – ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যখন নওগাঁর তালতলি বিলে আসেন তখন তিনি তার পিতা মাতার সাথে মান্দা উপজেলায় বসবাস করতেন।

প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পাড়ি দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য নওগাঁয় এসেছিলেন। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৪ বছর। তখন থেকে তিনি খালি গলায় গান করেন। এমন ভাবে সেই সময়কার স্মৃতিচারণ করছিলেন গান সামাদ।

তিনি বলেন – অবুঝ মন সিনেমার অবুঝ মন গান তাকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করেছিলো সেই সময় তিনি গানটি আয়ত্ব করার জন্য নওগাঁর তাজ সিনেমা হলে তিন বার সিনেমাটি দেখেছিলেন। এছাড়া বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী রাজ্জাক, শাবানা, কবরী এদের সিমেনার গান নিজের আয়ত্ব করার জন্য তিনি রেডিওতে তাদের গানগুলো সবসময় শুনতেন এবং নিজের আয়ত্বে নিতেন।

তিনি জানান- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মরহুম আব্দুল জলিল নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত দুবলহাটি স্কুলে বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংকৃতিক অনুষ্ঠানে তার গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন।

সেই সময় তাকে ২০০টাকা এবং কাপ পিরিজ উপহার দিয়েছিলেন। উপহারগুলো এখনও স্বযত্নে রেখেছেন এবং মাঝে মাঝে সেই গুলো দেখে স্মৃতিচারণ করেন তিনি। সেই সময় মঞ্চে আব্দুল জলিল গান শুনে মুগ্ধ হওয়ায় তাকে আর একটি গান শুনানোর অনুরোধ করেছিলেন বলে জানান এই পথ শিল্পি সামাদ।

তার গান শুনে এলাকাবাসী খুব আনন্দিত। অবসর সময়ে গান সামাদকে ডেকে নিয়ে এসে তাঁরা গান শুনেন বলে জানান। তাঁরা বলেন – তাদের সামাদ চাচার গান অসাধারণ লাগে। মাঠে কাজ করার সময় চাচা খালি গলায় যখন গান শুরু করেন তখন তাদের অনেক ভালো লাগে। তারা তাদের গান সামাদ চাচার গানে মুগ্ধ। তাঁরা তার সাফল্য কামনা করেন।

এদিকে অভাবের সংসারে গান সামাদ এর স্ত্রী মুঞ্জুয়ারা বেগম জানান- তার স্বামীর বয়স হয়ে গেছে। এখনও বয়স্ক ভাতা বা সরকারী কোন সহযোগিতা তিনি বা তার পরিবার পান নি। দিন এনে দিন খেয়ে তাদের জীবন চলেছে। তার চাওয়া কোন বড় পরিসরে তার স্বামী গান পরিবেশনের সুযোগ পেলে তাদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি হবে। তার স্বামীকে গান পরিবেশনের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।

পথে ঘাটে গান পরিবেশন করে জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন। শিক্ষার অভাবে কোথাও কোন সুযোগ গ্রহনে বিষয়ে তিনি কোনদিন খোঁজ খবর রাখেন নি। বর্তমানে এসে পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমার গান গেয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চান নওগাঁর গান সামাদ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে