কালবৈশাখী ঝড় হয় কেন?
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের বেশ কিছু জায়গায় আর ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু একটি জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সাথে বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও আবার শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
এগুলো অনেকটাই কালবৈশাখী ঝড়ের বৈশিষ্ট্য হলেও এ মূহুর্তে কালবৈশাখী ঝড়ের কোন সতর্কবার্তা নেই – উল্লেখ করা হয়েছে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সতর্কবার্তা না থাকলেও কালবৈশাখীর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সাধারণ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের প্রবল গরমের সময় কালবৈশাখী ঝড় হয় বাংলাদেশে। তবে এবার এর আগমন ঘটেছে তারও আগে।
অবশ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি মার্চ মাসের শুরুতেই মাস ভিত্তিক পূর্বাভাসে বলেছিলও যে এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুদিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দু-তিনদিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে।
সে অনুযায়ী মার্চ মাসে দেশের কয়েকটি জায়গায় কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। তবে কালবৈশাখী ঝড় এক সাথে অনেকগুলো জায়গায় হয়েছে গত বুধবার এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাতে মারা গেছে অন্তত ছয় জন।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে আর হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসে দক্ষিণে। এই ঠাণ্ডা ও গরম বাতাসের মিলনস্থলে বজ্রসহ ঘনকালো মেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস নিচে নেমে এসে কালবৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি করে।
সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ অঞ্চলের বাতাস সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।
এভাবে বিকালের দিকে এ অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে এবং হিমালয়ের দিকে বাতাসের চাপ বেশি থাকে। তাই উচ্চ চাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে মুখোমুখি স্থানে যে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয় সেটিই বাংলাদেশে কালবৈশাখী নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বই পুস্তকে কালবৈশাখী ঝড় সম্পর্কে আরও যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তা অনেকটা এমন।
এই কালবৈশাখী মূলত এক ধরনের স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড়। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে এই বজ্রঝড় বেশী হতে দেখা যায়। কালবৈশাখী ঝড়ের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটারের বেশিও হতে পারে।
এই ঝড়ের স্থায়িত্বকাল খুব বেশি হয় না। তবে কখনো কখনো এ ঝড় এক ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হতে দেখা গেছে। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় একেবারেই হঠাৎ করে ধেয়ে আসে না। ঈশান কোণে জমা হওয়া কালোমেঘ এ ঝড়ের আভাস দেয়।
বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে
আবহাওয়াবিদরা বলছেন খুব অল্প সময় অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি তৈরি হয় বলে কয়েকদিন দিন আগে এ সম্পর্কে ধারণা করা কঠিন। অবশ্য কোন অঞ্চলে ব্যাপক গরম পড়লে তখন কেউ কেউ অনুমান করেন যে এ ধরণের ঝড় হতে পারে। তবে এটি নিতান্তই আবহাওয়ার অবস্থা দেখে অনুমান করা। কালবৈশাখী কোথায় কতক্ষণ হবে সেটি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়ার মতো বৈজ্ঞানিক কোন উপায় এখনো নেই।
বজলুর রশিদ বলছেন, এটি তৈরি হয় ৫/৬ ঘণ্টা আগে আর শতভাগ বোঝা যায় ২/৩ ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হলে ঢাকায় আসতে যতক্ষণ লাগে সেটি বলে দেয়া যায়। আর কোথাও কোথাও অন্য লক্ষণ দেখে বিকালের ঝড় সম্পর্কে সকালে কিছুটা বলা সম্ভব হতে পারে বলছিলেন তিনি। তবে ঝড়ের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এখন হাই ইমপ্যাক্ট ওয়েদার এসেসমেন্ট টুল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নাসার মতো সংস্থাও এতে সহায়তা দিচ্ছে।
রশিদ বলেন, এটি আমরা ব্যবহারের চেষ্টা করছি। কিন্তু এটি মাঝে মধ্যেই ফলস অ্যালার্ম দিচ্ছে। সে কারণে এখনো নির্ভর করা যায় না। আরও কিছুদিন ব্যবহার চললে হয়তো বোঝা যাবে। এই আবহাওয়াবিদের মতে কালবৈশাখী সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন কারণ ঝড়টি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়।
কাল শব্দের অর্থ ধ্বংস এবং বৈশাখ মাসে উৎপত্তি হয় বলে একে কালবৈশাখী নামে অভিহিত করা হয়। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। সাধারণ ঝড় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে হয় গভীর সমুদ্রে নিন্মচাপসহ নানা কারণে। এসব ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ নাও চমকাতে পারে বা বজ্রপাত নাও হতে পারে।
কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয়। এ ধরনের ঝড়ে সাইক্লোন বা টর্নেডোর মতো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও যে এলাকায় এটি হয় সেখানে বাড়িঘর, জমি বা গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই কালবৈশাখী হয়। এর স্থায়িত্বকাল হয় অল্প। একটি কালবৈশাখী ঝড় তৈরি হয়ে পূর্ণতা লাভের পর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এর তীব্রতা থাকে। পরে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত শেষ বিকেলে এবং সন্ধ্যার দিকে কালবৈশাখী হয়। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে সন্ধ্যার পরে হয়। এবার চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সতর্কতা বাংলাদেশে এবার বছরের শুরু থকেই আবহাওয়ার আচরণকেই স্বাভাবিক মনে করছেন না আবহাওয়াবিদরা। এর ফলে দেশটিতে হয় টানা বৃষ্টি কিংবা টানা খরা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ধরণের পরিস্থিতিতে কালবৈশাখীর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, এবং এবার সময়ের আগেই দেশের কিছু জায়গায় যেভাবে কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে সেটি তারই তারই লক্ষণ মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। সূত্র- বিবিসি বাংলা