থুই চিং প্রু মারমার সংগ্রামী জীবন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২২; সময়: ৫:২২ অপরাহ্ণ |
থুই চিং প্রু মারমার সংগ্রামী জীবন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : অজপাড়া গা থেকে উঠে আসা এক সংগ্রামী জীবনের গল্প। সরকারি তিতুমীর কলেজ আক্কাসসুর রহমান আখি হলের প্রথম আদিবাসী ছাত্র থুই চিং প্রু মারমা।

থুই চিং প্রু মারমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আমার ভর্তি পরীক্ষা দেয়া শুরু হয়। সেই সময় ঢাকাতে আমি কাউকে চিনি না জানি না। প্রচুর বৃষ্টি সেদিন, বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় জুতা হাতে নিয়ে হাঁটুর উপর প্যান্ট তুলে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে বের হলাম।

কিন্তু ভাগ্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম না। এমনি আমার ব্যর্থ জীবন ছিলো। মন খারাপ ছিলো, কারণ ইচ্ছা ছিলো ছোটোকাল থেকে ঢাকাতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেয়ার। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো ঐতিহ্যপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করার।

ঠিক এমন মন খারাপ সময় এক স্যার আমাকে বলেছিলো থুইচিং তুমি মন খারাপ করো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বা রাজধানীতে থাকতে ইচ্ছা বেশি হলে আর একটা সুযোগ তোমার আছে।

তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজে আবেদন করতে পারো। স্যার আমাকে বিস্তারিত বলে দিলেন। তখন থেকে আমি প্রস্তুতি শুরু করলাম।

সাধারণ ঘরের ছেলে আমি। অর্থের দিক থেকে মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের। মনে আছে আমি ৩য় শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে আমি ভর্তি ফি ও কলম কিনতে না পারা একজন ছাত্র ছিলাম। কান্না করে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।

আমার এমন একজন ছিলো না যে, আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। কত রাত না খেয়েই ঘুমিয়েছি। কখনো কলা গাছের একটি অংশ সিদ্ধ করে খেয়েছি।

ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম ফিলআপের টাকা পর্যন্ত ছিলো না আমার কাছে। কোনোক্রমে এলাকার এক বড় ভাই মিসুইঅং মারমা থেকে সাহায্য পেয়ে আমি সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

আমার সিট পড়েছিলো তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগে। পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। আমার মেরিট পজিশন ভালো হয়েছে। চান্স পেয়েছি, তখন মনে হয়েছে হাতে এক টুকরো স্বর্গ পেয়েছি। সেদিন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলো।

আমি মারমা ছেলে আমার প্রথম ভাষা মারমা, দ্বিতীয় ভাষা বাংলা, তৃতীয় ভাষা ইংরেজি। সুতরাং আমার বাংলা ইংরেজিতে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে, বলতে গেলে বাঙালিদের মতো শুদ্ধ করে বলতে পারি না। কিন্তু চেষ্টা করেছি বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করতে।

আমি সাবজেক্ট চয়েস এ হিসাববিজ্ঞান ও বাংলা চয়েস দিয়েছিলাম কিন্তু কোনোক্রমে বাংলা বিষয় আসেনি এসেছে হিসাব বিজ্ঞান। আমি তিতুমীর কলেজে চান্স পাওয়ার ঐ দিন রাতে খুশিতে ভাত খেতে পারেনি।

ভর্তি হওয়ার পর আমার একটা খারাপ চিন্তা ছিলো যে সবাই খুবই খারাপ ব্যবহার করবে আমার সঙ্গে, আমাকে পাহাড়ি বলে বিভিন্ন রকম খারাপ মন্তব্য করবে বৈষম্য করবে। কিন্তু তারা এমন কিছু কখনও করেনি।

সরকারি তিতুমীর কলেজ আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় থেকে আশা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভাতৃত্বের বোধ জাগ্রত করতে চায়।

একজনের সঙ্গে আরেকজন যোগাযোগ, কলেজ ক্যাম্পাসে সম্প্রীতি বজায় রাখা, সবার সঙ্গে সম্পৃতির বন্ধনে গড়ে তোলা। আমরা যেন সাংবিধানিক হিসেবে আদিবাসী স্বীকৃতি পায়। আদিবাসী কালচারগুলো যেন সুরক্ষিত থাকে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০২২, এই তিন বছরে শিক্ষা মৈত্রী ঐক্য প্রগতির এই চারটি মূলনীতি কে পূজি করে সরকারি তিতুমীর কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের সাথে ভ্রাতৃত্ব এবং সম্প্রতির বন্ধন রক্ষা করে যাচ্ছে আদিবাসী ছাত্র সংগঠন সরকারি তিতুমীর কলেজ।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে