ভিন্ন রকম এক ইফতারের আমেজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২২; সময়: ৮:৫১ অপরাহ্ণ |
ভিন্ন রকম এক ইফতারের আমেজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ইবি : পড়ন্ত বিকেল। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। স্তব্ধ দুপুরের নিরবতা কাটিয়ে ক্রমাগতই পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠছে চারপাশ। কিচিরমিচির শব্দ মনে করিয়ে দেয় সন্ধ্যা সমাগত। এসময় সবুজে আচ্ছাদিত ক্রিকেট মাঠে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা।

স্বভাবতই ক্রিকেট মাঠে ব্যাট, বল হাতে ছুটোছুটি দেখা গেলেও এখানে ভিন্ন চিত্রের দেখা মেলে। কারো দু’হাত ভরে থাকে হরেক রকম ইফতার। কেউ বা সারাদিনের তৃষ্ণা মেটাতে নিয়ে আসে শরবত সামগ্রী। শীতল পাটির পরিবর্তে সাদা কালো খবরের কাগজেই শান্তির পরশ নিতে ব্যতিব্যস্ত কেউ কেউ।

বলছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হল সংলগ্ন ক্রিকেট মাঠের কথা। চার ছক্কার হৈ-হুল্লোড়ে মুখরিত সবুজ মাঠটিতে রমজানে নতুন আবেশের ছোয়া লেগেছে। পুরো মাঠ জুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ শিক্ষার্থীদের দল। কোথাও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বড় পরিসরে আয়োজন। কোথাও বা তিন চারজন বন্ধুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল। ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত তারা। ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে হাতে হাতে এগিয়ে চলে ইফতার পরিবেশনের কাজ। জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠনগুলোও এর বাইরে নয়। বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকেও থাকে ইফতারের বিশাল আয়োজন। সব মিলিয়ে সবুজ গালিচার মাঠটি হয়ে ওঠে জমজমাট ইফতার মাহফিল।

বাহারি রকমের ইফতারে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পাকোড়া, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপিসহ নানা মুখরোচক খাবার। এছাড়াও লেবুর শরবত এবং হরেক রকমের ফলফলাদিও পরিবেশিত হয়। ইফতারের পসরা সাজানো শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে মোনাজাতে অনুরণিত হয়ে ওঠে ক্রিকেট মাঠ।

ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে ব্যস্ত মাঠের চাঞ্চল্যতায় ভাটা পড়ে। খানিকটা নিশ্চলতায় ছেয়ে যায় চারপাশ। শ্রান্ত চেহারাগুলোতে ভেসে ওঠে অপেক্ষার ছাপ। যেন প্রত্যেকেই প্রহর গুনছে। কখন শোনা যাবে মুয়াজ্জিনের কন্ঠস্বর। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে মিনার থেকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। রোজার ইতি টেনে শুরু হয় পরিতৃপ্ত আমেজে ইফতার। একযোগে ইফতারে সারা দিনের ক্লান্তি যেন নিমেষেই ম্লান হয়ে যায়। রমজানের শিক্ষা, ত্যাগ ও প্রীতি-বন্ধনের এক অপরূপ দৃশ্য ফুটে ওঠে এ মিলনমেলায়।

ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি প্রকাশ করে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে রমজান কাটাচ্ছি। বড়ভাই, ছোটভাই, বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে না পারার দুঃখ অনেকটাই ঘুচে যাচ্ছে। বিকেল হলেই ক্যাম্পাসের ক্রিকেট মাঠে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বৃত্তাকার হয়ে বসছি সবাই মিলে। ইফতার শেষে মাঠেই নামাজ আদায় করছি। সবমিলিয়ে সত্যিই এক সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করছি।

কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রওশন আরা রিপা বলেন, বাসার বাইরে আমাদের প্রথম রমজান, তারপরও ক্যাম্পাসে ছোট-বড় সকলের মাঝে এত ভালোবাসার বন্ধন, মাঠে বসে একসাথে ইফতার করার মাঝেই ফুটে উঠছে যে আমরা ইবিয়ান আসলেই একটা পরিবার। পরিবারের অভাব বোধ একসাথে ইফতারেই যেন দূর হয়ে যায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে