এবারও ছিলনা বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে ওরশের সেই উৎসব

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২; সময়: ১২:১৫ অপরাহ্ণ |
এবারও ছিলনা বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে ওরশের সেই উৎসব

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক,বাঘা : চিঠি পত্র কিংবা মৌখিক কোন আমন্ত্রন ছাড়াই পবিত্র ওরশ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন দেশের দুর দুরান্তের হাজার হাজার নারি পুরুষ। এমনকি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত থেকেও আসতেন অনেকে। হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) এর এবং তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর ওফাত দিবসে ওরশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো রাজশাহীর বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে । প্রতিবছর আরবি শওয়াল মাসের ৩ তারিখ এর আয়োজন করতেন বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনা কমিটি। এবারেও আধ্যাত্বিক দরবেশের ধর্মীয় ওরশের আনন্দ ছিলনা বাঘা দরগা শরীফ প্রাঙ্গনে।

সর্বশেষ হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ) এর ৪৮৯ তম এবং তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর ৩৯০ তম ওরশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৪৩৯ হিজরি সনের ৩রা শওয়াল (ইংরেজি ২০১৮ সনের ১৮ জুন)। করোনার সংক্রমন এড়াতে, বিগত বছরগুলোতে বন্ধ ছিল ওরশ অনুষ্ঠান। এবারে সেই পরিস্থিতি নেই।

বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট, আধ্যাত্বিক দরবেশ ও পবিত্র ওরশ মোবারক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর মৃত্যুর পর,তাঁর তৃতীয় ছেলে মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রঃ) খানকার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ওই সময় তিনি দিল্লীর স¤্রাট শাহাজানের প্রেরিত একটি শাহী ফরমান যোগে ৪২ মৌজা মাদদমাস হিসেবে গ্রহন করেন। (১০৩০ হিজরি) যার বাৎসরিক শালিমানা ছিল ৮০০০ টাকা। এই মাদাদমাসের উদ্দেশ্য ছিল, এই অর্থ সৎ কাজে ব্যয় করা,পরিবার বর্গের ভরন পোষণ করা এবং বাদশাহের জন্য দোয়া খায়ের করা। মাওলানা শাহ আব্দুল ওয়াহাব (রঃ) এর মৃত্যুও পর ৪২টি মৌজা তার পুত্র হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক (রঃ) এবং হযরত শাহ মোহাম্মদ নুুরুল আরেফিনের পরিার বর্গেও মধ্যে বন্টন করা হয় এরই উদ্দেশ্য। হযরত শাহ মোহাম্মদ রফিক (রঃ) তার অংশের২০৩৭/আনা শালি আনার সম্পত্তি(১০২৮হিঃ) ওয়াকফ করেন। ১৮০৫ সনের পর থেকে এই ীসিল ওয়াকফনামা দলিলটি আর পাওয়া যায়না। ১৪ তম মোতাওয়াল্লি সাজ্জাদনিশীল খন্দকার মনিরুল ইসলামের সময় ১৯৫৩ সালে প্রজাসত্ব আইনটি পাশ হলে বাঘার রফিকি ওয়াকফ এষ্টেট অধিকাংশ প্রজা বিলি থাকায় সরকার অধিগ্রহন করে।

প্রসঙ্গতঃ ধর্মীয় আদর্শের দিক-নির্দেশনার মহৎ পুরুষ আব্বাসীর বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরফে শাহদৌলা (রঃ)ও তার ছেলে হযরত আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ (রঃ) এর সাধনার পীঠস্থান বাঘা। প্রায় ৫০০ বছর আগে সুদূর বাগদাদ থেকে ৫ জন সঙ্গীসহ বাঘা এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। বসবাস শুরু করেন, পদ্মা নদীর কাছে কসবে বাঘা নামক স্থানে। আধ্যাত্মিক শক্তির বলে এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ওরশের সঙ্গে ঈদের বাড়তি আনন্দ যোগাতে মেলার আয়োজন করা হতো। সেই মতে পবিত্র ওরশ মোবারক উৎসবকে কেন্দ্র বছর বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরে অনুষ্ঠিত হতো মেলা। সেই মেলা বাঘা ঈদ মেলা নামে খ্যাত। এবার সেই মেলাও বন্ধ ছিল। কিন্তু মেলার সাথে ওরশের সম্পর্ক নেই। বরং ওরশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই মেলা হতো। নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সব শ্রেণীর লোকের সমাগম ঘটতো এখানে। স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাদের বাস তারাও ছুটে আসতেন বাঘা দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত ওরশ মোবারকে। সীমান্তবর্তী এলাকার যাদের স্বজনরা সীমান্তের ওপারে আছেন,তারা বছরের এই সময়টা বেছে নিতেন একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য। মাজার জিয়ারত, মানত পরিশোধ, রোগমুক্তি, মনবাসনা পূরণ, আধ্যাত্মিক কামিয়াব লাভসহ নানা কারণে আসেন তারা। একদিনের এই ওরশে যোহর নামাজের পর কয়েক হাজার মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো হতো। খানকা বাড়ির মধ্যে রাতভর সামাকাওয়ালি,মারিফতি গানের আসর বসাতো ওরশে আসা লোকজন।

বাঘা মাজার ওয়াকফ এষ্টেট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব খন্দকার মুনসুরুল ইসলাম (রইশ) জানান, মূলতঃ ওরশ ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে দেশের দুর দুরান্ত নারি পুরুষদের সমাগম হতো বাঘায় । এখানে কেউ আসতেন নামাজ আদায় করতে,কেউ আসতেন ওরশে। পরবর্তীতে যা মেলায় রুপ নেয়। মেলার মাঠ ইজারা দিয়ে যে টাকা পাওয়া যেত,সেই টাকায় গরু-ছাগল কিনে ওরশ করা হতো। বাঁকি টাকা মাজার ফান্ডে জমা করে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হতো। এবার মেলার মাঠ ইজারা না দেওয়ায় কোন টাকা পাওয়া যায়নি। যার কারণে সীমিত পরিসরে ওরশের আয়োজন করা হয়েছে। এবার মেলার আয়োজন করতে নিষেধ ছিল বলে জানান তিনি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে