হাসপাতালে রোগীর কাছে টাকা দাবির অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২; সময়: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ |
হাসপাতালে রোগীর কাছে টাকা দাবির অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনার চাটমোহরে উপজেলা স্বাস্খ্য কমপ্লেক্সে বসে রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক সাইফুল আযমের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, টাকা দাবির প্রতিবাদ করায় রোগীর সাথে অশালীন আচরণ ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেছেন ওই চিকিৎসক ও তার সহকর্মিরা।

ঘটনার বিচার চেয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী রোগী। গত ৪ জুন দুপুরে ঘটনার অভিযোগ করলেও এক সপ্তাহে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোববার (১২ জুন) সকালে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা জানার পর তড়িঘড়ি করে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের মাঝগ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে হুমায়ুন রশিদ সোহাগ নামের এক যুবক তার কানের ভেতরে কটনবার দিয়ে পরিস্কারের সময় অসাবধানতাবশত তুলা কানের ভেতরে আটকে যায়। এতে কয়েকদিন ধরে অসস্তিতে ভুগছিলেন তিনি।

বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে দ্বারস্থ হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের। গত ৪ জুন দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে গেলে তাকে পাঠানো হয় ২২ নম্বর কক্ষে দায়িত্বরত নাক, কান গলা বিভাগে।

সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুল আযম সোহাগের কান পরীক্ষা করে ‘কানের অবস্থা খারাপ করে ফেলছেন’ উল্লেখ করে ভয় ধরিয়ে দেন। তারপর কানের ভেতর থেকে জিনিসটি বের করতে চিকিৎসক সাইফুল আযম ৩শ’ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

সোহাগ আরো জানান, সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে টাকা দিতে হবে কেন জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক রেগে বলেন, কান থেকে তুলা বের করলে ৩শ’ টাকা দিতে হবে। না হলে এখান থেকে বের হন। ভুক্তভোগী তার এমন ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে ওই চিকিৎসক ও তার সহকর্মিরা উত্তেজিত হয়ে আরও অশালীন আচরণ ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে সে ওই চিকিৎসক ও তার সহকর্মিদের বিচার চেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগটি হাসপাতালের হেড ক্লার্ক নুরুল ইসলামের কাছে জমা দেন তিনি।

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, ওই ব্যক্তিকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো লিখিত অভিযোগ তিনি পাননি। লিখিত না পেলে তো আমরা মুখের কথায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।

৪ জুন দেয়া লিখিত অভিযোগ ১২ জুনেও তার কাছে পৌঁছায়নি কেন বিষয়টি অনুসন্ধানে অভিযোগকারী হুমায়ুন রশিদ সোহাগকে সাথে নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হেড ক্লার্ক নুরুল ইসলাম লিখিত অভিযোটি কতৃপক্ষকে ফাইলে দিয়েছেন সেইদিনই।

পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক বুলবুলের কাছে গেলে তিনি বলেন, অভিযোগ তার কাছে যায়নি। এ সময় হেড ক্লার্ককে ডেকে পাঠালে তিনি ফাইল নিয়ে আসলে দেখা যায়, সেই ফাইলে লিখিত অভিযোগটি রয়েছে। তখন ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, এটাতো আমাকে দেখানো হয়নি।

এ সময় তাৎক্ষনিক তিনি ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ফরহাদ পারভেজ লিখনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, সদস্য সচিব মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক ও সদস্য ডা. আসিফ উদ্দিন খান। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক সাইফুল আযম বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। নাক, কান গলার চিকিৎসা করাতে যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন সেসব যন্ত্রপাতি হাসপাতালে নেই। আমার ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি দিয়ে আমি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেই। অভিযোগকারীর কানের খুব গভীরে কটটা গেছে যেটা হাসপাতালে বের করা সম্ভব ছিল না। বাইরে থেকে করতে বলেছি। তার সাথে নগন্য কথা হয়েছে। অশালীন বা খারাপ আচরণ তার সাথে হয়নি।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগকারী বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জিত করছেন। আমি ইতিমধ্যে থানার ওসি ও সার্কেল সাহেবের সাথে কথা বলেছি। আমি তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে