বায়ুদূষণে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা

প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২২; সময়: ১২:৪০ অপরাহ্ণ |
বায়ুদূষণে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রায় সময়ই বিশ্বে বায়ুদূষণের মাত্রায় সবার শীর্ষে থাকে বাংলাদেশের নাম। আর এই দীর্ঘমেয়াদি বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশিরা গড় আয়ু হারাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) গবেষকদের প্রকাশিত এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইপিআইসি গবেষকরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে গড়ে সাত বছর করে আয়ু হারাচ্ছে বাংলাদেশিরা।

ইপিআইসি প্রবর্তিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স (একিউএলআই) নির্ণয়ে গবেষকরা বাতাসে পিএম২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) এর মাত্রা হিসাব করতে স্যাটেলাইটের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দেয়া প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার দেশের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।

স্যাটেলাইটের নতুন তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২০ সালে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫ এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম। কোভিড-১৯ মহামারির লকডাউন চলার থাকার সময়েও এই দূষণকারী কণার উপস্থিতি বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।

এর আগে ২০১৯ সালে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫ এর পরিমাণ ছিল ৬৭ মাইক্রোগ্রাম এবং গত এক দশকে তা ৬৩ থেকে ৭৭ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে ওঠানামা করেছে।

বায়ুদূষণের এই সূচকের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ু মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হচ্ছে ভারতের নয়াদিল্লি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের কারণে বৈশ্বিক গড় আয়ু মাথাপিছু দুই বছর এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গড় আয়ু পাঁচ বছর করে কমছে।

ইপিআইসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া বায়ুদূষণের সীমা (দূষণকারী কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম) প্রয়োগ করে হিসাব করা হয়, তাহলে দেশে মাথাপিছু গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস করে কমছে। আর কিছু এলাকায় দূষণের মাত্রা এতই বেশি যে সেখানে গড় আয়ু কমার পরিমাণ ৯ বছর।

বাংলাদেশে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত সীমা (প্রতি ঘনমিটারে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ১৫ মাইক্রোগ্রাম) এবং ডব্লিউএইচওর সীমা দুটোই অতিক্রম করে গেছে।

গবেষকেরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শিশু ও প্রসূতির অপুষ্টির কারণে গড় আয়ু প্রায় দেড় বছর কমে যাওয়া এবং ধূমপানের কারণে গড় আয়ু দেড় বছর কমে যাওয়ার সঙ্গে বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমে যাওয়ার তুলনা করছেন।

ইপিআইসির বায়ুদূষণের সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকার বাসিন্দারা গড়ে ৮ বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। চট্টগ্রামের বাসিন্দারা গড়ে সাড়ে ছয় বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সবগুলোতেই বাতাসে দূষণকারী কণার উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর সহনীয় সীমার বেশি।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে বাংলাদেশের গড় আয়ু হ্রাসের পরিমাণ বিশ্বের মোট আয়ুষ্কালের ৫২ শতাংশ এর কারণ হলো, এখানকার বাতাসে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে দূষণকারী কণা উপস্থিতি রয়েছে।

প্রতিবেদনে ভারতের কয়েকটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর উপস্থিতি শনাক্ত করলেও সার্বিক দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই শীর্ষে রেখেছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই দশকে এই অঞ্চলে শিল্পায়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধি এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে শুধু ভারত ও পাকিস্তানের রাস্তায় ২০০০ সালের শুরু থেকে এই পর্যন্ত মোটরগাড়ি বেড়েছে চারগুণ। আর শুধু বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের এর মধ্যে মোটরযান তিনগুণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ঢাকার ৬০ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী ইটভাটা। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে, যা বায়ুদূষণ কমানো এবং জমির উপরিভাগের মাটি সংরক্ষণে সহায়ক হবে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, অবশ্য এই নীতিগুলোর আদৌ সফল হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে বাতাসে দূষণকারী কণা কমেছে কি না সেটা নিণর্য়ের মাধ্যমে। এ জন্য আসন্ন বছরগুলোতে এসব দেশের বাতাসের মান বিষয়ক তথ্য-উপাত্তের গণনাভিত্তিক মূল্যায়ন দরকার হবে আমাদের।

ইপিআইসির এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের পরিচালক ক্রিস্টা হাসেনকফ বলেন, দূষণের প্রভাব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া বাড়ায় এখন সরকারগুলোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে নীতি বদলানোর পক্ষে একটি শক্তিশালী, কারণ উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।

গবেষণা প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য বায়ুদূষণের হুমকিকে খাটো করে দেখা হয়েছে এবং এই সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত তহবিলও বরাদ্দ করা হয় না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে