বাগমারায় তিন ফসলী জমি দখল করে পুকুর খনন

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২; সময়: ২:৫২ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় তিন ফসলী জমি দখল করে পুকুর খনন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের প্রভাবশালী মনুসর রহমান, আব্দুল বারিক, মকবুল হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আয়ান উদ্দীন ও শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বাইগাছা ও মধ্যদৌরতপুর গ্রামের আবু সামা মিষ্টার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও বুল বুল হোসেনের বিরুদ্ধে রাতের বেলায় কৃষকদের তিন ফসলীসহ ধানী জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কৃষকেরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাধা দিলে পুকুর খননকারীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। নিরুপায়ে কৃষকেরা ত্রিপুল লাইনে ফোন দেয়। ত্রিপুল লাইনের ফোন পেয়ে বাগমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পুকুর খনন করতে বারন করে আসেন।

পুকুর খননকারীরা প্রভাবশালী ও আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী হওয়ায় কারো কথাই তারা কর্ণপাত করছেনা। কৃষকেরা পুকুর খনন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। প্রতিকার না পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন জমির মালিকেরা।

তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতারা জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কৃিষ জমিতে পুকুর খনন করা যাবে না মর্মে কৃষিমন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ও উচ্চআদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের ৭৫/৮০ কৃষক অভিযোগ করে বলেন, দুবিলার ছাওয়ালকান্দা বিলে তাঁদের জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল করে আসছেন। তবে ওই গ্রামের উপরোক্ত বাসিন্দারা গত (১৮জুন) শনিবার রাতে তাদের লাঠিয়াল বাহীনি নিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জবর দখলের মাধ্যমে জমিতে এক্সেভেটর দিয়ে পুকুর খনন শুরু করেন। রাতেই কৃষকেরা পুকুর খননে বাধা প্রদান করলে বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে নানা ভাবে তাঁদের ভয়ভীতি দেখান।

নিরুপায়ে তাঁরা বিষয়টির প্রতিকার জানিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। একই আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। রাতের বেলায় কৃষকদের জমিতে খনন কাজ অব্যাহত রাখেছেন। গত কয়েক রাতে প্রায় প্রায় ৭০/৮০ বিঘা কৃষিজমি ঘিরে ফেলেছেন পুকুর খননের জন্য।

একই ভাবে অবৈধ পুকুর খননের কাজ শুরু করেছেন উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের দুবিলায়। ওই ঘটনায় পুকুর খনন বন্ধের জন্য একই ইউনিয়নের মধ্যদৌলতপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম, নাজমুল হক, মুনতাজ আলী, রাজিয়া বিবি নামের কয়েকজন কৃষক তাদের জমি রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

তারা অভিযোগ করেন, উপরোক্ত অভিযুক্তরা আওয়ামীলীগের ছত্রছায়াই থেকে কৃষকদের জমি জবর দখলের মাধ্যেেম পুককুর খননের কাজ শুরু করেছেন। পুকুর খনন করা হলে আশপাশের কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিবে এবং চাষাবাদ ব্যাহত হবে। তাঁরা স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানিয়ে এর প্রতিকার দাবি করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল পুকুর খননের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকলেও উপজেলা প্রশাসনের দুর্বলতার কারনেই চলছে অবৈধ পুকুর খনন। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না আওয়ামী লীগের নামধারী এলাকার প্রভাবশালী পুকুর খননকারীদের। ব্যবস্থা নিচ্ছে না আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

অবৈধ পুকুর খননের কারনেই অধিকাংশ সরকারী খাল গুলো ওই প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। বন্যা হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মানুষ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান বলেন, তদন্ত করে অল্প সময়ের মধ্যেই ওই সকল অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে