পদ্মা সেতুর সমীক্ষা বন্ধ করেছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২; সময়: ১২:৩২ অপরাহ্ণ |
পদ্মা সেতুর সমীক্ষা বন্ধ করেছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর সমীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১ টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার আমাদের গর্ব। প্রমত্ত পদ্মা নদী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে বিছিন্ন করে রেখেছিল। আমরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সে কষ্টটা ভালো করে জানি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জানে কী ঝুঁকি নিয়ে এবং কতটা সময় ব্যয় করে আমাদের রাজধানীতে পৌঁছাতে হয়।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমি সরকার গঠন করি, এরপর ১৯৯৭ সালে আমি জাপান সফরে যায়। সেখানে গিয়ে আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছিলাম আমাদেরকে পদ্মা নদীতে ও রূপসা নদীতে সেতু করে দিতে হবে। আমি তাদেরকে প্রস্তাব দেই, তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা পৃথিবীর খরস্রোতা নদীর মধ্যে একটি। আমাজনের পরেই পদ্মা। জাপান পদ্মা নদীতে সেতু করার জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু করে। আমি একটু এখানে স্বরণ করতে চায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৩ সালে যখন জাপান সফরে গিয়েছিলেন তখন যমুনা নদীর উপর সেতু এবং পদ্মা সেতুর কথা বলেছিলেন। তবে যমুনা নদীর সেতুর ওপরই তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং তখন জাপান সরকার যমুনা নদীতে সমীক্ষা করে। জাপানের সহযোগিতায় আমাদের যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাপান সমীক্ষা করে ২০০১ সালে আমাদেরকে রিপোর্ট হস্তান্তর করে। তার ওপর ভিত্তি করে ওই বছরের ৪ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। সমীক্ষায় জাপান মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি সরকার এসে সেটা বন্ধ করে দেয়।

সে সময় বিএনপি নেত্রী বলেছিল যে, এটা এখান থেকে হবে না এটা আরিচা ঘাট থেকে হবে। তারা তখন জাপানকে আবার সমীক্ষা করতে বলে। তখন জাপান সমীক্ষা করে ২০০৩ বা ২০০৪ সালে যে রিপোর্ট দেয় সেখানেও তারা মাওয়া থেকে এই পদ্মা সেতু করতে বলে। তখন আমরা শুনেছিলাম দুইটা পদ্মা সেতু হবে কিন্তু বিএনপি সরকার কিছুই করতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আবারও সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেই। এরপর আমরা নকশা তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি মনসেল এ কম-কে নিয়োগ দেই। শুরুতে পদ্মার প্রকল্পে রেল চলাচলের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল এটা মাল্টিপারপাস হওয়া উচিত। কারণ, বার বার এ নদীর ওপর সেতু করা যাবে না কারণ, এটা অনেক খরস্রোতা নদী। পরে রেল সুবিধা রেখে এ এটির চূড়ান্ত নকশা করা হয়।

২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরের বছর ডিপিবির সংশোধনী করা হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এ ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল কিন্তু সেখানে অন্যান্য সুবিধাগুলো ছিল না। সেখানে নদী শাসন করে নদী ছোট করে পদ্মা সেতু করার কথা ছিল কিন্তু আমি কখনই পদ্মা নদীকে সংকোচন করে নিয়ে আসার পক্ষে ছিলাম না।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫.৫৮ কিলোমিটার পরে পদ্মার হিসাব নিয়ে এটা ৬.১৫ কিলোমিটার নিয়ে মূল সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেভাবে ডিজাইন করা হয়। প্রথম ডিপিবিতে সেতুর ৪১টি স্পানের মধ্যে ঠিক করা হয়েছিল মাত্র তিনটি উঁচু করা হবে এবং সেখান থেকে নৌযান যাবে।

কিন্তু পদ্মা নদীতে যারা কখন লঞ্চ ও স্টিমারে গিয়েছেন তারা জানেন পদ্মার স্রোত কেমন। এই স্রোত কোনো বাঁধ মানে না, এটি কখন কোন দিকে যাবে সেটা কেউ কখনো বলতে পারে না। সে কারণে আমার সিদ্ধান্ত ছিল পুরো নদীর যেকোনো জায়গা থেকে যেন জাহাজ যেতে পারে এবং স্প্যানগুলো যতড়া চওড়া করা যায় সেভাবেই নকশা করা হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে