উল্লাপাড়ায় দুই বাড়ীতে কিশোর গ্যাংয়ের ভাংচুর-লুটপাট, আহত ৫

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২২; সময়: ১:১০ অপরাহ্ণ |
উল্লাপাড়ায় দুই বাড়ীতে কিশোর গ্যাংয়ের ভাংচুর-লুটপাট, আহত ৫

নূর ইসলাম রোমান, তাড়াশ : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পুর্ণিমাগাঁতীতে ইমন বাহিনীর (কিশোর গ্যাং) বিরুদ্ধে দুটি বাড়ী ভাংচুরসহ লুটপাট ও নিরহ লোকজনের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ হামলায় আহত হয়েছেন ৫ জন।

সোমবার (১১ জুলাই) দুপুর ১ টার দিকে উল্লাপাড়া উপজেলার পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের কোনাগাঁতী গয়হাট্রা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, ফয়সাল আহমেদ (২৩),আব্দুল হান্নান (২৭), কোরবান আলী (৪২), রানা (৩২) ও এনামুল হক (২৭)। এদের মধ্যে ফয়সাল আহমেদ ও আব্দুল হান্নান’কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলার পুর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কোনাগাঁতী গয়হাট্রা গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন সরকার ইমনের নেতৃত্বে বিভিন্ন বয়সীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ইমন বাহিনী নামক কিশোর গ্যাং। এ গ্যাংয়ের সদস্যরা সাবেক চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ইমনের নেতৃত্বে এলাকার নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

সে ধারাবাহিকতায় তারা সম্প্রতি একই গ্রামের আইয়ুব সরকার, আব্দুল খালেক সরকার, শাহ আলম সরকার, মাহমুদ আলী মাস্টার, মুসলিম সরকার, আমজাদ সরকার ও মুসা সরকার এর নিজস্ব ৭ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে পুকুর খনন করে ভোগ করছে। এতে প্রতিবাদ করেও তারা কোন প্রতিকার না পাওয়ায় অবশেষে ইমন বাহিনীর ওই গ্যাংয়ের কবল থেকে ওই খননকৃত পুকুর ও জমি উদ্ধার করার জন্য উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট মৌখিক ও থানায় যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন উল্লেখিত ভুক্তভোগি জমির মালিকগণ।

এতে সাবেক চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ইমনসহ তার গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ইমন প্রতিপক্ষদেরকে শায়েস্তা করতে গত ১৬/৬/২০২২ তারিখ রাত ৮টার দিকে সুপরিকল্পিতভাবে তার আপন চাচা বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম খলিলুর রহমান সরকারের বসতবাড়ীর পরিত্যাক্ত গোয়াল ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে কোর্টে ২২ জনের নামে দুটি নাশকতা ও দুটি ১০৭ ধারার মামলা দায়ের করে। যে দুটি নাশকতার মামলার বাদী আল আমিন সরকার এর আপন চাচাতো ভাই আতিকুর রহমান, আর ১০৭ ধারার দুটি মামলার একটির বাদী আল আমিন সরকার ও আরেকটির বাদী মনিরুজ্জামান। নাশকতার দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলা থানায় ও আরেকটি মামলা পিবিআই’তে তদন্তাধীন রয়েছে।

অপরদিকে ১০৭ ধারার দু’টি মামলার মধ্যে একটি মামলার নামিক আসামীরা কোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন এবং আরেকটি মামলায় ১৭ জুলাই ২২ জামিনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই একপর্যায়ে ঈদের পরদিন ১১ জুলাই সোমবার দুপুর ১টার দিকে ফয়সাল আহমেদ (২৩), আব্দুল হান্নান (২৭), কোরবান আলী(৪২), রানা(৩২) ও এনামুল হক(২৭) নিজ গ্রাম গয়হাট্রা চেয়ারম্যান বাজারে বসে থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার ইমনসহ তার গ্যাংয়ের সদস্য সামিউল (১৮), আবু সাইদ(২৩), সাইদুর রহমান (২৬), রমজান আলী (২৫), রুমেল (১৯), রুবেল(২০), রাসেল (১৭), আশিক(১৫), ওমর আলী(১৭), আমির হোসেন(২৫), নুর মোহাম্মাদ(১৬), জুয়েল(১৪), আল আমিন(১৪) ও সোহাগ (১৪) দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়।

এসময় তাদের হামলায় ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ফয়সাল আহমেদ (২৩), আব্দুল হান্নান (২৭), কোরবান আলী (৪২), রানা (৩২) ও এনামুল হক (২৭) গুরুতরভাবে আহত হয়। এদের মধ্যে আহত ফয়সাল আহমেদ ও আব্দুল হান্নানকে মুমুর্ষু অবস্থায় সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে আহতদের জীবন রক্ষার্থে যখন তার স্বজনরা ব্যস্ত ছিল ঠিক তখনই হামলাকারীরা গিয়ে বাহাদুর সরকার ও আইয়ুব সরকারের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।

অভিযোগকারী ফয়সাল আহমেদ ও আব্দুল হান্নান আরও জানান, ইমন বাহিনী (কিশোর গ্যাং) এর নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও মাদক কারবারী, অস্ত্র প্রদর্শন, মানুষকে জিম্মি, সালিসের নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, জমি দখল, লুটপাট, গরীবের খাসি ছিনতাই করে ভুড়িভোজ ও চুরি সংগঠিত হচ্ছে। এ বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক, ছিনতাই, চুরি, হত্যা ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এই বাহিনীর নানাবিধ অত্যাচার ও নির্যাতনে এলাকার সাধারণ ও নিরীহ লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে ভুক্তভোগী নিরহ লোকজন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীপ্রার্থী আল আমিন সরকার ইমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার কারণে তাদের উপর তিনি ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা নানাবিধ নির্যাতন করছে। এ নির্যাতনের মাত্রা যেন দিনদিন বেড়েই চলছে।

এদিকে ধারাবাহিক নির্যাতন ও অতর্কিত হামলাসহ বসতবাড়ী ভাংচুর লুটপাটের এঘটনায় এলাকা জুড়ে এখন চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ও ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে এলাকার আতঙ্কিত ও শান্তিপ্রিয় জনগণ এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রশাসনের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অপরদিকে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে