কারারক্ষী স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২২; সময়: ৭:৩০ অপরাহ্ণ |
কারারক্ষী স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ : কারারক্ষী স্বামীর বিরুদ্ধে বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া, বাড়ি করার নামে ১০ লাখ টাকা যৌতুক গ্রহণ ও স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন সময় শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া কারাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় কারারক্ষী স্বামী আতিকুরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে গেলে তৎকালীন জেলার শরিফুলের কাছে যৌন হয়রানির স্বীকার হন বলে অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূ।

সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ওই কারারক্ষীর স্ত্রী শাপলা বানু (২৮) এসব অভিযোগ করেন। স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা ওই কারারক্ষী আতিকুর রহমান (৩৪) বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে কর্মরত রয়েছেন। জেলার শরিফুল ইসলাম নওগাঁ কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শাপলা বেগম অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে পারিবারিকভাবে নওগাঁ সদর উপজেলার চুনিয়াগাড়ী গ্রামের মোজাফফর হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর বাড়ি করার নামে তাঁর প্রবাসী বাবা সাইদুর রহমানের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। মেয়ের সংসারের সুখের জন্য তাঁর বাবা আতিকুরকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে কারারক্ষী আতিকুর রহমান গাইবান্ধায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তাঁর ওপরে একাধিকবার নির্যাতন করেন।

পরে স্বামীর বদলিজনিত কারণে নাটোর ও বগুড়ায় থাকা অবস্থায় ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। নির্যাতনের কারণ খুঁজতে গিয়ে শাপলা একপর্যায়ে জানতে পারেন, তাঁর স্বামী নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে একাধিক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন। আতিকুরের এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট গ্রামের বাড়ি চুনিয়াগাড়ীতে নিয়ে গিয়ে শাপলাকে সাদা কাগজে সই করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সাদা কাগজে সই করতে রাজি না হলে পরিবারের লোকজনের সহযোগিতায় আতিকুর তাঁকে মারপিট করেন। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পেরে চ-িপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিয়ের কথা গোপন রেখে অন্য মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ও তাঁকে শারিরীক নির্যাতন করার অভিযোগে স্বামী আতিকুরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট বগুড়া কারাগারের জেলার শরিফুল ইসলামের কাছে যান শাপলা বেগম। অভিযোগ দিতে গেলে জেলার শরিফুল তাঁকে আলাদা একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ফোনে থাকা অশ্লীল ছবি দেখিয়ে তাঁকে কুপ্রস্তাব দেন। জেলারের এমন আচরণের জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগের পরেও স্বামী আতিকুর ও জেলার শরিফুলের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা করেন শাপলা বেগম। আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি নওগাঁ সদর থানায় রেকর্ড করা হয় এবং ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি শাপলার স্বামী আতিকুর রহমান ও তাঁর শাশুড়িকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শাপলা বেগম বলেন, মামলা করার পর থেকেই আমাকে ও আমার বাবা-মাকে নানাভাবে হুমমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আতিকুর মামলার পিপিকে (সরকারি কৌসূলি) বলেছেন, তিনি নাকি জেলার শরিফুলের মধ্যস্ততায় দুই বছর আগে আমাকে তালাক দিয়েছেন। তালাকের মোহরানার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নাকি আতিকুর পরিশোধ করে দিয়েছেন। মামলার পরবর্তীতে শুনানিতে নাকি জেলার শরিফুল নাকি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হবেন। তালাক ও মোহরানা নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আতিকুর ও জেলারের সাজানো নাটক। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার ন্যায়বিচার পাব কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্ত্রী-সন্তানের অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার কামনায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে কারারক্ষী আতিকুর রহমান বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যা বলার সেখানেই বলব। শুধু বলব, আমার বিরুদ্ধে নির্যাতন ও যৌতুকের যেসব করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

জেলার শরিফুল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় কর্মকরত থাকা অবস্থায় কারারক্ষী আতিকুরের স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে একবার এসেছিলেন। আমি তাঁকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে