মেঘের রাজ্য সাজেকে একদিন
সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি : যতদূর দৃষ্টি যায়, সবুজে ছাওয়া উচুঁ-নিচু পাহাড়। উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ। এদিক-ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনানী আর বর্ণিল সব পাখি। কখনো বা পাহাড় ফাঁকে ছোট কোনো নদী, উঁচু-নিচু পাহাড়, তার মাঝ দিয়ে আকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা, সব মিলেয়ে অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম খাগড়াছড়ির সাজেক।
এই ব্যস্ততার জীবন ছেড়ে হঠাৎ করেই পাহাড় যেতে ইচ্ছে করলো। যেই চিন্তা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লাম প্রকৃতির টানে।
রাজধানীর সাইদাবাদ থেকে রাত ১১টার দিকে ভ্রমণ প্রিয় পর্যটন গ্রুপের সাথে বাসে উঠলাম আমি এবং আমার বন্ধু আরিফ। তখন আনুমানিক ভোর ৪টা। খাগড়াছড়ি প্রবেশের সময় জানালা দিয়ে দেখছিলাম উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ।
সকাল ৭টা নাগাদ আমরা খাগড়াছড়ি দিঘীনালা বাজারে পৌঁছাই। সেখানে একটা হোটেলে সকালের নাস্তা করার পর চাঁন্দের গাড়ি আসে। আমরা ট্যুর গ্রুপের সাথে যাওয়ার কারণে চাঁন্দের গাড়ি, থাকার রিসোর্ট, খাওয়া এই সব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি।
নাস্তা করে আমরা সকলে রওনা দিলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে। আকাবাঁকা সাপের মত রাস্তা উঠে যাচ্ছিলো পাহাড়ের উপর দিয়ে। গ্রুপের আমি আর আরিফ অন্য সবাইকে না চিনলেও আমরা সবাই এক সাথে গেয়ে উঠছিলাম ‘জল ছবি হাফ টিকিট, ঝালমুড়ি, রংমশাল, বন্ধু চল, কখনো বা, এই শহর থেকে ঠিক অনেক দূরে, চলো কোথাও চলে যাই।’
প্রায় ১২ টার দিকে আমরা সাজেকে পৌঁছাই। সেখানে মেঘালয় রিসোর্ট আমাদের জন্য বুক করা ছিলো। এক রুমে চারজন করে।
প্রথমে একটু চিন্তায় ছিলাম কেমন হবে আমার রুমমেটগুলো। রুমে ঢুকার পর জানতে পারলাম যে তিনজন রয়েছে সবাই আমার ছোট। সবার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। সেখানে ভাত, ব্যাম্বো চিকেন, পাহাড়ী সবজি, আর ডাল দিয়ে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া হলো।
ঘরের বারান্দা থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। চারদিকের পাহাড় সাথে সাদা মেঘের ভেলা। এত মেঘ এই প্রথম আমার দেখা। মনে হবে প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দিয়েছে।
বিকেল ৪ টার দিকে আমরা বেরিয়ে পড়লাম কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। সাজেকের সব থেকে উঁচু পাহাড় হচ্ছে কংলাক পাহাড়। আমরা সবাই আবার চাঁন্দের গাড়িতে উঠলাম কারণ আমাদের রিসোর্ট থেকে কংলাক পাহাড় বেশ খানিক দূরের পথ ছিলো।
অনেকটা খাড়াভাবে গাড়ি উপরের দিকে উঠল পাহাড়ের মাথায়। একটা জায়গায় গাড়ি থামলো, জায়গাটার নাম আমি এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।
সেখানে অনেকগুলো ছোট বাচ্চা বাঁশ বিক্রি করছিলো পাহাড়ে ভর দিয়ে উঠার জন্য। আমাদের ১০ টাকা করে কিনতে হলো বাঁশ।
আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি যার কারণে সেখান থেকেই শুরু হলো ছবি তুলার পালা। আমি পাহাড় পাগল মানুষ। প্রকৃতি আমাকে সব সময় টানে। সেদিন এমন মেঘ আর পাহাড় দেখে মনে হয়েছিলো যেন স্বর্গে এসেছি।
আমরা পাহাড় চূড়ায় উঠলাম। সেখানে আরো বেশি কাছে মেঘের দেখা পেলাম। আমি তখন প্রকৃতির রুপ দেখতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় আরিফ বাশেঁর চোঙে তেতুল চা এনে দিলো।
একদিকে প্রকৃতির অরূপ রূপ আর অন্য দিকে বাশেঁর চোঙে তেতুল চা মুহুর্তটা এত বেশি সুন্দর আর উপভোগ্য করে তুলেছিলো যা আমি কোনো রকম ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না।
সন্ধ্যা হওয়ায় সেদিনের মতো আমরা ফিরে এলাম। আসার সময় অবশ্য আমি আর আরিফ গ্রুপের কারো সাথে আসিনি । আমরা কংলাক পাহাড় থেকে হেঁটে এসেছিলাম হেলিপ্যাডে সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
চারিদিকে গোধূলি রং ছড়াচ্ছে। পাহাড়ের উপর থেকে এই প্রথম ছিলো আমার সূর্যাস্ত দেখা। সব মিলিয়ে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিলো আমার জীবনে। যা সারাজীবন সুখস্মৃতি হয়ে গেঁথে রইবে আমার জীবনে।
লেখক : ছাত্র ও সাংবাদিক