ফাঁদে ফেলে ধনাঢ্যদের ব্ল্যাকমেইল করে বিলাসবহুল জীবন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২; সময়: ১০:০১ অপরাহ্ণ |
খবর > জাতীয়
ফাঁদে ফেলে ধনাঢ্যদের ব্ল্যাকমেইল করে বিলাসবহুল জীবন

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়। তারপর কৌশলে হোটেল কিংবা আবাসিক ফ্লাটে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ। আর সেই ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত দুই নারীসহ সাতজনের একটি চক্রকে আটক করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর ভাটারা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুপুরে বিস্তারিত জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া ও তানিয়া আখতার সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিত্তবানদের আকৃষ্ট করতো। নানা রকম ও কায়দার পেজ খুলে ধনাঢ্য ও কর্পোরেট ব্যক্তিদের ‘টার্গেট’ করে থেকে পাঠানো হতো বন্ধুত্বের অনুরোধ। এরপর বন্ধুত্ব গড়ে ডেকে নেয়া হতো বাসায় বা হোটেলে।

এজন্য তাদের প্রথম পছন্দ ছিলো অভিজাত এলাকা বসুন্ধরার কিছু ফ্লাটে। তাদের ফাঁদে পা দেয়া মানুষটি সেই ফ্লাটে যাওয়া মাত্র চক্রের বাকি সদস্যরা তাদের জোর করে নগ্ন ছবি তুলে রাখতো। এরপর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অংকের টাকা। গত দুবছরে এভাবে ফাঁদে ফেলে ধনাঢ্য ও কর্পোরেট অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আল মাহমুদ ওরফে মামুনের নেতৃত্বে একটি চক্র।

লে. কর্নেল মোমেন বলেন, এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন ও তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার ও সহযোগী মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এ দুই নারীর ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাতো।

ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে উপস্থিত হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যান্য সদস্যরা ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতো। এ কৌশলে চক্রটি অর্ধ শতাধিক ভুক্তভোগীকে ব্ল্যাকমেইল করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অসদুপায়ে অর্জিত টাকায় গ্রেফতাররা বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে আসছিলো।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার হওয়া একজন আল মাহমুদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। তারা দুজনে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করতেন। মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে।

সম্প্রতি একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, গত ২২ জুলাই ফেসবুকের মাধ্যমে প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট প্রিয়া কৌশলে তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যায়।

রুমের ভেতরে ঢোকার পর প্রিয়া ও তার সহযোগীরা জোরকে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। এসব ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগীর বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়।সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ঘটনা প্রথমে চেপে যায়।

এক সপ্তাহ পর গ্রেফতার আল মাহমুদ ভুক্তভোগীর কাছে আরও দু’লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা দু’লাখ টাকা না দিলে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এরপর ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে র‍্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে