জেলেদের পদ্মায় মাছ ধরতে দিতে হবে চাঁদা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : পাবনা সদর উপজেলার ভবানীপুরের জেলেদের পদ্মায় মাছ ধরতে দিতে হচ্ছে চাঁদা। অন্যথায় পদ্মায় মাছ ধরতে দেবে না এলকার একটি প্রভাব শালী মহল। এই গ্রামে পদ্মায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় শতাধীক জেলে পরিবার। তারা এখন নদীতে মাছ ধরতে গেলে চাঁদা না দিলে নানা রকম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভবানীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী শাহাদাৎ প্রামাণিক জানান, এলাকার প্রভাবশালী আলাউদ্দিন ও খাদেমুল তার বাহীনিকে নদীতে মাছ ধরতে হলে চাঁদা দিতে হবে। না দিলে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মাছ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ওদের ভয়ে অনেকেই নদীতে মাছ ধরতে পারছে না।
ভুক্তভোগী জেলেদের পক্ষে শাহাদাৎ পাবনা আমলি আদালত-১ এ একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৮ জুলাই বাঁশেরবাদা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন ও খাদেমুলের নেতৃত্বে একদল লোক তার কাছ থেকে মাছ বিক্রির সাড়ে ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। একই দিন, রাতে মামলার সাক্ষী আরও ৬ জেলের কাছ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা ও মাছ ছিনিয়ে নেয়।
এদিকে, চাঁদা আদায় বন্ধের দাবিতে ভূক্তভোগী জেলেরা নদী পাড়ে প্রতিবাদ,মানববন্ধন করেছেন। এ বিষয়ে খাদেমুল বলেন, ‘এটি মূল পদ্মা নদী নয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন বাঁশেরবাদা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনের নামে জয়েনপুর মৌজার জলমহাল ইজারা দিয়েছে। এটা সেই জলমহালের অংশ। তিনি আরো বলেন, জলমহালের এ অংশে ইজারার টাকা পরিশোধের জন্য জেলেদের কাছে টাকা চাওয়া হয়। চাঁদা না। তারা তা না দিয়ে জোরপূর্বক জলাশয়ে মাছ ধরছেন, মিথ্যা দোষারোপ করছেন।
ভবানীপুর মৎস্যজীবীদের দাবি, জয়েনপুর মৌজা ঈশ্বরদী উপজেলার। আমরা ইজারার জায়গায় মাছ ধরতে যাইনা। আমাদের পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে বাধা দিচ্ছে। ভবানীপুর গ্রামের মৎস্যজীবী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পাবনা সদর উপজেলার ভবানীপুর, ভগীরতপুর ও রতনপুর গ্রামের শতাধীক মৎস্যজীবী প্রতিদিন নদী থেকে মাছ ধরে পাবনার বাজারে বিক্রি করে। তারা যুগের পর যুগ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রবাহমান নদী কখনো ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ ইজারার কথা বলে জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ইজারা পাওয়া আলাউদ্দিন বলেন, সরকারি নিয়ম মেনেই নদীর কূল ও জলমহাল ইজারা নেওয়া হয়েছে। জেলেরা টাকা না দিলে ইজারার টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এখানে জেলেদের নামে প্রকৃত জেলে নয় এমন লোকজন মাছ ধরছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী ইজারার বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজমুস সাদাত রত্ন জানান, ‘প্রবাহমান নদী বা নদীর কূল ইজারা দেওয়া হয়নি, যদি না তা জলমহাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
যখন কাউকে জলমহাল ইজারা দেওয়া হয় তখন চুক্তিতে চৌহদ্দি উল্লেখ করা থাকে। চাইলেই ইজারার কাগজ দেখিয়ে যেকোনো জায়গায় খাজনা নেওয়া যায় না। ভবানীপুর গ্রামের জেলেদের কাছ থেকে ‘চাঁদা’ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।