মধুমতি সেতুতে যান চলাচল শুরু

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২২; সময়: ৩:০৭ অপরাহ্ণ |
মধুমতি সেতুতে যান চলাচল শুরু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে সোমবার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেতুটি।

এ সময় ঢল নামে উৎসক জনতার। এরপর সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কাটিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পেরে খুশি যানবাহন চালকসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।

সেতু উদ্বোধনের পর অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুরছেন স্বপ্নের মধুমতি সেতুতে। স্বপ্ন যেন বাস্তবে ধরা দিয়েছে সেতু এলাকার দুপাড়ের মানুষের মাঝে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।

এদিকে, সেতুটি চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, যশোর, খুলনা, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয়ের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়নের আশা করছেন সবাই। দীর্ঘদিনের ফেরী পারাপারের দুর্ভোগ কাটিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে যেতে পেরে খুশি যানবাহন চালকরা।

উদ্বোধনের দিন রাত ১২টা ১মিনিট থেকে মধুমতি সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই সেতু পারাপারের অপেক্ষায় ছিল মোটরসাইকেল ও যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন।

ডিজিটাল পদ্ধতির ৮টি টোল বুথের মধ্যে প্রথম দিনে ৪টি চালু থাকায় সেতুর দুই পাশে যানবাহনের সারি তৈরি হয়। তবে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে সবগুলো টোল বুথ চালু হওয়ার আশা কর্তৃপক্ষের।

মধুমতি সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, মধুমতি সেতুতে টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে- বড় ট্রেইলার ৫৬৫টাকা, তিন বা ততোধিক এক্সসেল বিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০টাকা, দুই এক্সসেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫ টাকা, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকাপ, কনভারশনকৃত জিপ ও রে-কার ৯০ টাকা, প্রাইভেটকার ৫৫ টাকা, অটোটেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিনচাকার যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেল পাঁচ টাকা।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি।

সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে।

তবে এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিচ্ছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা নেই। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে।

নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলেন গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার কোটি কোটি মানুষ।

আজ তাদের স্বপ্ন পূরণ হলো। এ সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিপ্লব ঘটবে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে