শরৎ এর পরশে শুভ্রতর প্রকৃতি

প্রকাশিত: ১১-১০-২০২২, সময়: ১৮:২৮ |

বিথী আক্তার, কুষ্টিয়া : রুপ রহস্যের অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যে ভরপুর বাংলাদেশ। এদেশের ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপবৈচিত্র্যে ভরে ওঠে প্রকৃতি। কখনো কোকিলের কুহুতানে চারিদিক চঞ্চল। কখনো বা বৃষ্টির রিনিঝিনি ছন্দে মুখর প্রকৃতি। কুয়াশার চাদর জড়িয়ে প্রকৃতিতে আসে স্নিগ্ধতার পরশ। দেখা মেলে সবুজ ফসলে ছেয়ে যাওয়া বাংলার বিস্তৃত দিগন্ত।

বৈচিত্র্যময় এই বাংলায় মোহময় সৌন্দর্য্য নিয়ে শরৎকাল আবির্ভূত হয়। ছন্দময় বাংলার প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা জুড়ে দিতে এ ঋতুর আগমন। শরৎ এর পরশে শুভ্রতায় ছেয়ে যায় চারপাশ। সাদা মেঘের ভেলায় করে প্রকৃতিতে আসে স্নিগ্ধতার আবেশ । বাহারি ফুলের দৃষ্টিনন্দন আবহ আকৃষ্ট করে প্রকৃতি প্রেমীদের।

ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। শ্রাবণের একটানা বর্ষণের পর এ ঋতুতে কোমলতা ফিরে পায় প্রকৃতি। তবে এ দুই মাসে দেখা যায় প্রকৃতির নানা রকমের ছন্দ। শরৎকাল যেন নানান ঋতুর মৃদু সন্নিবেশ। এ ঋতুতে ভাদ্রের ‘তালপাকা’ গরমে গ্রীষ্মের কথা মনে পড়ে। কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভেজা প্রকৃতি জানান দেয় বর্ষার। আশ্বিনের মৃদু শিশির ভেজা শীতল সকাল প্রকৃতিতে ছুয়ে যায় সমাগত শীতকালের পরশ।

শরৎকালে মাঠে মাঠে সবুজ ফসলের লাবন্যময়ী খেলায় মেতে ওঠে প্রকৃতি। দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠে হিমেল হাওয়া বয়ে যায়। এ হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে মাঠে ধ্বনিত হয় তরঙ্গিত ফসলের ভুবন ভোলানো হাসির ছন্দ। সোনালি রোদের আলোয় দোদুল্যমান ফসলে যেন বেজে ওঠে আগমনীর সুর। চোখ বন্ধ করলেই শোনা যায় হেমন্তের পদধ্বনি।

শরৎ এর আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় লুকোচুরি খেলে সূর্যটা। শিউলি ঝড়া সকালে লাল টকটকে সূর্যের উদয়ে দিনের শুরু হয়। সূর্যের অনু কীরণের ছোঁয়ায় জ্বলজ্বল করে দূর্বাঘাসের শিশির বিন্দু। একটু পরেই স্বচ্ছ নীল আকাশে দেখা যায় সাদা মেঘের ভেলা। সূর্যাটা লুকিয়ে পড়ে মেঘের আড়ালে। শুভ্রতায় ছেয়ে যায় নির্মল আকাশ। আবার পরক্ষণেই মেঘমালার পেছন থেকে উঁকি দিতে দেখা যায় সূর্যকে। ঝলমলে আলোয় ভরে যায় চারপাশ। আলোছায়ার খেলায় মেতে ওঠে প্রকৃতি।

শরৎ এর সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দিতে এসময়ে নানা রকম ফুল ফোটে। সাদা মেঘে আবৃত আকাশের মতোই ধবধবে সাদা কাশফুলে দিগন্ত ছেয়ে যায়।নদীর কিনারাগুলো হয়ে ওঠে কাশবনের স্বর্গরাজ্য।কাশফুলের মনােরম দৃশ্য থেকে সত্যিই চোখ ফেরানাে যায় না। এছাড়াও এসময় শিরীষ, ছাতিম, বকফুল, মিনজিরি, শেফালি, শিউলি, বেলি, দোলনচাঁপা, বকুল, শালুক, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, কাশফুল, মাধবী, মল্লিকা, মালতীসহ হরেক রকম ফুলে ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতি।

শরৎ এর মোহময় সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয় প্রতিটি মানুষ। জোৎস্নামাখা রাতে ভেসে আসা শিউলি ফুলের ব্যাকুল করা সুবাসে মন ভরে যায়। সকালের ঝড়া শিউলির গায়ে মৃদু শিশির বিন্দুর মোহময় দৃশ্য। নদী তীরে কাশফুলের রাজ্য সাদর আহবান জানায় প্রকৃতি প্রেমীদের। সত্যিই শরৎকাল প্রকৃতিতে নিয়ে আসে অপরুপ রূপবৈচিত্র্য।

তাইতো শরৎ এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘শরৎ তোমর অরুণ আলোর অঞ্জলি, ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি’

 

উপরে