পাবনা জেলা বিএনপিতে কমিটি নিয়ে অসন্তোষ চরমে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২২; সময়: ৫:১৫ অপরাহ্ণ |
পাবনা জেলা বিএনপিতে কমিটি নিয়ে অসন্তোষ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনা জেলা বিএনপির অভ্যান্তরে কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ চরম আকার ধারন করেছে। উপজেলা ও পৌর কমিটি সহ অধিনস্থ বিভিন্ন ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা নিয়ে এই অসন্তোষ। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দিয়েছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম-আহ্বায়ক।

২৫ অক্টবর মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুগ্নআহবায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা । তিনি জানান, সোমবার (২৪ অক্টোবর) ডাকযোগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু ও আমি যুগ্ম-আহবায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা এই চিঠি পাঠিয়েছি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার অন্যান্য আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একতরফা ভাবে সুজানগর উপজেলা ও পৌর এবং সাঁথিয়া পৌর বিএনপির পকেট কমিটি করায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কিসের বিনিময়ে এই আহবায়ক কমিটি দিচ্ছে তা আমাদের জানা নেই।

আহবায়ক ও সদস্য সচিব এই সব কমিটিতে আহবায়ক ও সদস্য সচিব করেছে তাদের মধ্যে কিছু কিছু সদস্য দীর্ঘ ১০/১২ বছর দলীয় কোনও কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা ছিল না। তারা অতীতে যেমন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছে বর্তমানেও চলছে। এমন সব ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা হলেও ত্যাগি ও পরীক্ষিত কোনও ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার যুগ্ম-আহবায়কদের সাথে আলোচনা করছেন না।

আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও ফেসবুকে চিঠিটি দেখেছি। তাদের অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে বলতে পারেন, অফিসে এসে বলতে পারেন। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারেন না। এটা দিয়ে তারা মহা অন্যায় করেছে। গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছে। সাধারণত কোনও কমিটি করতে গেলে আহবায়ক-সদস্য সচিবই ঠিক করে, তারপরও আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিভিন্ন কমিটি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব কমিটি দিয়েছি- তারা বলুক যে ওই সব কমিটির অমুক অমুক অযোগ্য আর যোগ্যদের নাম বলুক। আমরা বিষয়টি দেখবো। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারে না। তাদের অভিযোগগুলো ঠিক না। যাদের জ্ঞানের অভাব আছে তারা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারে। এই সময়ে এটা দেয়া ঠিক হয়নি।

উল্লেখ্য, পাবনা জেলা বিএনপির পরপর তিনবার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল কর্মী দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং । যা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলে আড়াই বছর। সে কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাদের উপর দ্বায়ীত্ব ছিলো পাবনা জেলা উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন এর নতুন করে কমিটি গঠন করে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জিবিত করা। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ কাজের কাজ কিছুই করতে পারে নাই সেই কমিটি। এ কমিটি ভেঙে গত এপ্রিল মাসে ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে আবারও ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘ জটিলতার পর দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এ কমিটির তালিকা গত ২২ আগস্ট পাবনায় পৌঁছে। এই কারণে বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ-বিভেদ দেখা দেয়। অনেক নেতা কর্মী রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন এবং নিয়েছেন। মূলত নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি।

২০১৯ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে আড়াই বছর। এ সময়ের মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। মাত্র এক বছরের মাথায় নবগঠিত ৯টি কমিটিই আবার বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। গত ১১ সেপ্টেম্বর নতুন আহ্বায়ক কমিটির প্রথম নির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল। পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে দলে আরও তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয় বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।

জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। সেই থেকে বিভক্তি শুরু পাবনা জেলা বিএনপিতে। তৈরি হয় ‘বিএনপি রক্ষা কমিটি’। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে ৪৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান আহ্বায়ক ও সিদ্দিকুর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল ৯০ দিনের মধ্যে জেলার ৯ উপজেলা ও ৯ পৌরসভার ১৮টি নতুন কমিটি গঠন করা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে