রংপুরে নির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি?

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২; সময়: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ |
রংপুরে নির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সিটি করপোরেশন রংপুরে ভোটের বাকি আর মাত্র একদিন। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) উত্তরের এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় এক মাস ভোটের মাঠ সরগরম ছিল প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়। এবার শুরু হয়েছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। রংপুর সিটি নির্বাচনে কে হাসবেন শেষ হাসি- সেটার আলোচনা চলছে এখানকার মানুষের মুখে মুখে।

এই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট নয়জন প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় রয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে একজন সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই দুজনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। যদিও তিনি ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।

নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার রংপুর সিটি নির্বাচনে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হতে পারে। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরে একদিকে লাঙ্গল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সরকারে থাকায় উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে নৌকার সম্ভাবনাও কম নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মিলনের সম্ভাবনার কথাও বলছেন কেউ কেউ। বর্তমান সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করায় এই সিটিতেও কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। দলটির ভোট বিভিন্ন প্রার্থীর বাক্সে ভাগাভাগি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নিজের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নগরবাসীর কাছে আরেকবার সুযোগ চান। তিনি আবার বিজয়ী হয়ে স্মার্ট নগরী গড়ে তুলবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জিতবেন বলে নিজের প্রত্যয়ের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন সদ্য সাবেক মেয়র।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলছেন, নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। সরকার যখন সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন করছে তখন রংপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র না থাকার কারণে এই সিটি পিছিয়ে পড়ছে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আধুনিক নগরী গড়বেন বলে ওয়াদা করেছেন।

এদিকে কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিকল্পিত নগরী গড়তে চান স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। বিশেষ করে বর্ধিত ওয়ার্ডের ভোটারদের নানা সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়ে তাদের ভোট টানার চেষ্টা চালাচ্ছেন এই প্রার্থী।

সিটি নির্বাচনে সব প্রার্থীই সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক বাতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বিনোদন, স্বাস্থ্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বস্তিবাসীর উন্নয়নসহ যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। এসব ওয়ার্ড সিটি করপোরেশনে যুক্ত হলেও তেমন কোনো সুবিধাই পাননি এলাকাবাসী। তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যাকে ভোট দেবেন তিনিই রংপুরে হাসতে পারেন শেষ হাসি।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সামসুল হক জানান, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে থাকে। কাঁদা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। তিনি বলেন, ‘ভোট আইসে ভোট যায়, এলাকার কথা কেউ মনে রাখে না।’

তবে সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা দাবি করেছেন, বর্ধিত ওয়ার্ডে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এসব ওয়ার্ডে এক টাকা করও আরোপ করেননি বলে দাবি তার।

নির্বাচনে মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির খোরশেদ আলম (গোলাপ ফুল), জাসদের শফিয়ার রহমান (মশাল), খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান (দেয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান (ডাব), স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি (হরিণ)।

এদিকে নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি পুরোদমে চালাচ্ছে। আগামীকাল সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ভোটের সরঞ্জাম।

রংপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, আজ (রোববার) রাত ১২টায় শেষ হবে সবধরনের প্রচার-প্রচারণা। মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত টিম রয়েছে। কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গ হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের পুরো টিম সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।

ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ২১৯টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ইভিএম মেশিন এসেছে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং করা হয়েছে।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি করপোরেশনে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সোয়া চার লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩৩টি ওয়ার্ডের ২২৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে এবং ভোটকেন্দ্রগুলো থাকবে সিসিটিভির আওতায়।

২০১২ সালের ২৮ জুন পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রথম নগরপিতা নির্বাচিত হন।

তবে দ্বিতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে হেরে যান তিনি। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয়বারের নির্বাচন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে