সুজানগরের চরাঞ্চলে নিত্যদিনের ভরসা এখন ঘোড়ার গাড়ি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩; সময়: ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ |
সুজানগরের চরাঞ্চলে নিত্যদিনের ভরসা এখন ঘোড়ার গাড়ি

এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ ও কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের বাহন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার হারিয়ে গেলেও চরাঞ্চলের মালামাল ও মানুষের যোগাযোগের বাহন হিসেবে এখনো ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে।

বর্ষার সময় যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা আর কালের পরিক্রমায় পাবনার সুজানগরের চরাঞ্চলে শুকনো মৌসুমে মালামাল বহনের একমাত্র বাহন হলো ঘোড়ার গাড়ি। এ কারণে বর্তমানে চরবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ঘোড়ার গাড়িযোগেই বহন করে থাকেন।

জানাযায়, পদ্মা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চর জাগতে শুরু করে। চর জাগলেই শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি যোগাযোগের অন্যতম বাহন হয়ে দাঁড়ায় চরাঞ্চলের মানুষদের কাছে। সুজানগরের পদ্মার চরাঞ্চলে উঁচু নিচু ও বালুমিশ্রিত পথে অন্য কোনো যানবাহন না চলায় শেষ ভরসা ঘোড়ার গাড়িতেই।

উপজেলার চর মানিকদীর, চলনাচরপাড়া,চরভবানীপুর,চরসুজানগর,চরখলিলপুর,,লক্ষীপুরসহ স্থানীয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রধান বাহন হিসেবে বর্তমানে দিব্যি চলছে ঘোড়ার গাড়ি। নদীর পানি নেমে যাওয়ায় পদ্মার চরাঞ্চলে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার বেড়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে চরবাসীর কষ্টের স্বপ্নের ফসল মূলকাটা পেঁয়াজ, বাদাম, ভুট্ট, মসুর ডাল, বোরো ধানসহ নানা ফসল চরাঞ্চলের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে খুবই কষ্ট হয়ে থাকে। তাই এ কষ্ট লাঘবে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করছে এ অঞ্চলের মানুষ।

চর ভবানীপুর গ্রামের ঘোড়ার গাড়ি চালক আলাল হোসেন বলেন, বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জিবিকা নির্বাহ করে থাকি। সংসার চালানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘোড়ার গাড়ি চালাই। দৈনিক আয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবারের জন্য ব্যয় করতে হয় ২৫০ টাকা। বাকি টাকায় চলে সংসার।

চর খলিলপুর গ্রামের ঘোড়ার গাড়ি চালক আব্দুল লতিফ বলেন, ২ বছর আগেও এই চরে ১২-১৫টি ঘোড়ার গাড়ি ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলে এখন ৫০ থেকে ৬০টি ঘোড়ার গাড়ি হয়েছে।

চর মানিকদীর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান,উপজেলার বিভিন্ন চরে মালামাল পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহারের ফলে যেমন দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ, তেমনি কমছে পরিবহন খরচ।

চর মানিকদীর এলাকার বাসিন্দা কৃষক জাহিদ হোসেন বলেন, পদ্মার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। যার কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি এ চরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা। এ ছাড়া চরের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল জমি থেকে তুলে বাড়ি কিংবা ও উপজেলা শহরে বিক্রি করার জন্য আনার মাধ্যম এ ঘোড়ার গাড়ি।

সাগরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী জানান,ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহনের ভিড়ে রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ী আগের মতো চোখে না পড়লেও চর অঞ্চল গুলোতে নদীর বুকে নৌকার পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ী প্রচলন রয়েছে। পদ্মা নদীবেষ্টিত এই জনপদে রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। বর্ষায় নৌকা ব্যবহার হলেও গ্রীস্মে চরাঞ্চলে মানুষদের পরিবহন মানেই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি।

সুজানগর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রবীন সাংবাদিক আব্দুস শুকুর বলেন, আগে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। এক সময় উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলে দেখা মিললেও সময়ের ব্যবধানে এখন শুধু চরেই দেখা মেলে ঘোড়ার গাড়ি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন ,শুধু পণ্য পরিবহন নয়,ঘোড়ার গাড়ি এখন চরাঞ্চলের কয়েক শ মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। মরুভূমির জাহাজ খ্যাত উটের মতো ঘোড়া এখন চরের জাহাজ হয়ে উঠেছে।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে