২০ মিনিটেই জন্ম নিবন্ধন!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩; সময়: ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ |
২০ মিনিটেই জন্ম নিবন্ধন!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও যেখানে বৈধ পদ্ধতিতে জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। তবে দুই লাখ টাকা চুক্তিতে মাত্র ২০ মিনিটে জন্ম নিবন্ধন করা যায়। একদিনে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সাত দিনে পাসপোর্ট তৈরি করে দেয় জালিয়াতচক্র।

গোয়েন্দা এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে এমনই ভয়াবহ তথ্য। রোহিঙ্গা অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামই এখন তাদের মূল টার্গেটে পরিণত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অনুসন্ধানে তথ্য অনুযায়ী, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে থার্ড পার্টি অ্যাপস এবং ম্যালওয়ার সফটওয়ার ব্যবহার করে সীমিত সময়ের জন্য জন্ম নিবন্ধন এবং এনআইডি সার্ভারে প্রবেশের সুযোগ পায় এই চক্রের সদস্যরা। আর ম্যানুয়েল সিস্টেমে সরকারি দপ্তরগুলোর দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের পাসওয়ার্ডকে কাজে লাগানো হতো। দুই পদ্ধতিতেই তৈরি। এক্ষেত্রে শুধু নাম সঠিক থাকলেও বাকি সব তথ্য প্রতারকচক্রের নিজের মতো করে দেয়া বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।

সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, কৌশলে জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডির সার্ভার হ্যাক করে তথ্য সংযুক্ত করছেন হ্যাকাররা। পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের আইরিশ দেয়ার ব্যবস্থাও করেছে প্রতারক দল। এমনকি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পর শুধু ডেলিভারি নিতে ভোগান্তির শেষ থাকে না, সেখানে মাত্র এক সপ্তাহে সবকিছুরই ব্যবস্থা করছে একটি প্রতারকচক্র। তাও অফিসে আসার পরিবর্তে একেবারে ঘরে বসে। বিশেষ করে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দুই লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে প্যাকেজের আওতায় জন্ম নিবন্ধন-জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

সিএমপি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার লিয়াকত আলী খান বলেন, এ ঘটনায় সম্প্রতি ১১ জনকে এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, হ্যাকারদের দেশজুড়ে একটি সিন্ডিকেট আছে। তারা এ পর্যন্ত ৫ হাজার জন্ম নিবন্ধন করেছেন। তার ব্যক্তির নাম ঠিক থাকে তবে ফোন নম্বর ও ঠিকানা ঠিক থাকে না। তারা দুই লাখ টাকা চুক্তিতে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটে জন্ম নিবন্ধন করে ফেলেন।

সার্ভার হ্যাকের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন এবং কর্মচারীদের পাসওয়ার্ড দিয়ে এনআইডি কার্ড নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতারকচক্রের সর্বশেষ পর্যায়ে থাকে পাসপোর্ট। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং চোখের আইরিশ নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রতারকচক্র সরাসরি চিহ্নিত কিছু পাসপোর্ট অফিস ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরা পাসপোর্ট ডেলিভারি নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। হাতে পৌঁছাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার শঙ্কা এই কুরিয়ার পদ্ধতি বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট কেলাংকারিতে আটক রোহিঙ্গারা।

সিএমপির উপকমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ানও এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সার্ভার হ্যাকের অভিযোগে ৫টি, রোহিঙ্গা এনআইডি জালিয়াতির ৭টি এবং পাসপোর্ট জালিয়াতি সংক্রান্ত অন্তত ৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের প্রায় ৩০ জন গ্রেফতার হলেও মূলহোতারা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে