রমজানে নওগাঁয় ১৫ কোটি টাকার টুপি রপ্তানির সম্ভবনা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩; সময়: ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ |
রমজানে নওগাঁয় ১৫ কোটি টাকার টুপি রপ্তানির সম্ভবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ: গ্রামীণ নারীদের হাতে সুচ ও রঙ্গিন সুতায় নিপুন সেলাইয়ে তৈরি হয় বিশেষ ধরণের টুপি। টুপির রাজধানী হিসেবে পরিচিত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা। যা গত প্রায় ১৫ বছর আগে এ উপজেলায় শুরু হয়েছিল। এখন সারা জেলায় তৈরি হচ্ছে এ টুপি। আর এসব টুপি চলে যাচ্ছে মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সারা বছরই এসব টুপি তৈরি হলেও ঈদে মাস এলে বেড়ে যায় এসব টুপির চাহিদা। এমাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার টুপির রপ্তানির আশা স্থানীয় ব্যবসায়িদের। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উদ্যেক্তারা আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন।

মহাদেবপুর উপজেলা গত প্রায় ১৫ বছর আগে সাদা কাপড়ের ওপর বিভিন্ন নকশায় সুঁই-সুতার নিখুত সেলাইয়ে টুপির যাত্রা শুরু হয়। বছর বছর চাহিদা বেড়ে এখন জেলার অন্যান্য উপজেলায় তৈরি হচ্ছে এসব টুপি। সুঁই-সুতা দিয়ে তৈরী হয় চমৎকার এসব টুপি। বছরের দুই ঈদের এই টুপির চাহিদা থাকে বেশি।

সারা বছর টুপি সেলাইয়ের কাজ হলেও রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আর এসব টুপি চলে যায় মধ্যপাচ্যের দেশ ওমান, সৌদিআরব, কুয়েত ও কাতারে। সাদা কাপড়কে সাইজ মতো কেটে সেলাই ও নকশা করে পাঠানো হয় বিভিন্ন গ্রামের নারী কারিগরদের কাছে। এরপর কয়েক হাত ঘুরে সুঁই ও রঙ্গিন সুতা দিয়ে নিখুঁত ভাবে সেলাই করে তৈরি হয় টুপি। প্রকার ভেদে এসব টুপি বিক্রি হয় ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এক সময় টুপি তৈরির সুতা ঢাকা থেকে নিয়ে এসে কাজ করতেন ব্যবসায়িরা। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন মহাবেপুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে সুতার দোকান। যা থেকে কর্মসংস্থান গড়ে উঠেছে বেকারদের।

এসব টুপির কারিগর মুলত নারীরা। সাংসারিক কাজ শেষে পাড়ায় পাড়ায় নারীরা একত্রিত হয়ে গল্পে আড্ডায় তৈরি করেন টুপি সেলাইয়ের কাজ। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আরো ১০টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এ টুপি তৈরী কাজ। টুপি তৈরীর সাথে জেলার প্রায় ৪০ হাজার নারী কারিগর জড়িত। টুপি তৈরির কাজ করে বাড়তি আয় করে সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। জনপ্রতি অন্তত ২-৫ হাজার টাকার আয় করছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা।

ব্যবসায়িরা জানান, জেলায় প্রায় ৭ জন মহাজন (বড় ব্যবসায়ি) আছে। এ মৌসুমে জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার পিস টুপি উৎপাদন হয়েছে। যার উৎপাদন খরচ প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে বাজার মুল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। যা রপ্তানি করা হবে। তবে সরাসরি নিজেরা রপ্তানি করতে পারলে বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারতেন তারা। ব্যবসার পরিধি বাড়াতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

মহাদেবপুর উপজেলার মধুবন গ্রামের টুপির কারিগর মৌসুম বেগম বলেন, গত প্রায় ১০ বছর থেকে টুপির সেলাইয়ের কাজ করছি। আগে দানা সেলাইয়ের কাজ করতাম। মজুরি ছিল ২৫০-৪০০ টাকা। সময় ও পরিশ্রম বেশি হতো সে তুলনায় মজুরি কম ছিল। তবে এখন দানা সেলাইয়ে মজুরি প্রায় ১৫০০ টাকা। এক কাজ সময় বেশি লাগায় করা হয় না। তবে টুপির হাসু (দুই সেলাইয়ের মাঝে মোটা সুতা ঢুকানো) কাজ করা হয়। এ কাজের পরিশ্রম কম হয়। প্রতিটি টুপির মজুরি পাওয়া যায় ১৫ টাকা। মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকার মতো কাজ করা যায়। সংসারের কাজের পাশাপাশি এ কাজ করা হয়। বাড়তি আয়ে সংসারে অনেক সুবিধা হয়েছে।

উদ্যোক্তা ইসরাফিল হোসেন বলেন, দানা, চেইন, ভরাট ও মাছকাটা এই চারধরণের টুপি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে এসব টুপি তৈরিতে খরচ পড়ে ২৬০ টাকা ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। মাঠ থেকে তৈরি হওয়ার পর এসব টুপি প্রকারভেদে ৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা লাভে স্থানীয় ব্যবসায়িদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ টুপির সাথে প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা (ছোট ব্যবসায়ী) জড়িত। আমরা ছোট ব্যবসায়ি পুঁজি কম। যদি সরকার থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা করা হতো আমাদের ব্যবসার পরিধি আরো বাড়ানো যেত।

উপজেলার কুঞ্জবন গ্রামের পাইকারি টুপি ব্যবসায়ি আমিনুল হক বলেন, গত ১৫ বছর থেকে টুপি ব্যবসায়ির সাথে জড়িত। এ বছর ৫ কার্টুন টুপি যাবে বিদেশে। প্রতিটি কাটুনে প্রায় ৫ লাখ টাকার টুপি আছে। বাঙ্গালি কিছু ব্যবসায়ি বিদেশে আছে তাদের কাছেই টুপি পাঠানো হয়। তারা দ্বিগুন দামে টুপি বিক্রি করে লাভবান হয়। কিন্তু আমরা যদি সরাসরি টুপি রপ্তানি করতে পারতাম তাহলে লাভবান হতে পারতাম। সেইসাথে টুপির সাথে যারা জড়িত বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ি ও কারিগর তাদের বেশি দাম ও মজুরি দিতে পারতাম।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান বলেন, টুপি তৈরিতে উপজেলাসহ জেলার সুনাম ছড়িয়েছে। এসব টুপি চলে যাচ্ছে মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এ টুপির সাথে অনেক নারী কারিগর জড়িত আছে। এ কাজ করে তারা বাড়তি আয় করতে পারছেন। টুপির কাজকে এগিয়ে নিতে উদ্যোক্তাদের সহযোগীতার জন্য ব্যাংকগুলোকে উদ্বৃদ্ধ করা হবে। যেন সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে তারা টুপির কাজকে আরো প্রসারিত করতে পারেন। এতে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনেকরি।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে