তানোরে মাটির দেয়ালে চাপা পড়ে নিহত ১

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩; সময়: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ |
তানোরে মাটির দেয়ালে চাপা পড়ে নিহত ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : রাজশাহীর তানোর পৌর সদরে হাজী ওসমানের গোয়াল ঘরের ঝুঁকিপূর্ন মাটির দেয়াল অপসারনের কাজ করার সময় দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে মাহবুর রহমান লিয়ন (২৯) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে মর্মান্তিক এই ঘটে।

তিনি তানোর পৌর এলাকার কুঠিপাড়া মহল্লার আনেস প্রামানিকের পুত্র। এসময় তার সাথে থাকা শীতলি পাড়া মহল্লার এন্তাজের পুত্র মমিন (২৫) নামের আরেক শ্রমিকের কোমর ভেঙ্গে আহত হয়েছেন।

তানোর পৌর সদর হিন্দুপাড়াস্থ ওসমান হাজীর অন্ধকার গোয়াল ঘরে ঝুঁকিপূর্ণ মাটির দেয়াল অপসারণ করানোর ঘটনায় লিয়নের মৃত্যু ও মমিনের মাজা ভেঙ্গে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় কুঠিপাড়া ও শীতলি পাড়া মহল্লাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসার পাশাপাশি চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত লিয়নের মা হাজানারা বাদি হয়ে তানোর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া।

খবর পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, নিহতের মা কাউকে আসামী করে মামলা করবেন না ও আহত শ্রমিকের কোন অভিভাবক আসেননি।

তিনি বলেন, নিহতের পরিবার ইচ্ছে করলে কাউকে আসামী করে মামলা করতে পারবেন। কিন্তু পরিবারের কেউ যদি মামলা না করে সেক্ষেত্রে অপমৃত্যুর মামলাই হয় বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তানোর হিন্দুপাড়াস্থ ওসমান হাজির পাকা বাড়ির পশ্চিমে গোয়াল ঘরে মাটির দেয়ালটি ঝুকিপূর্ন অবস্থায় ছিলো।

ওই গোয়াল ঘরের দেয়ালের ধারে গরুকে পানি ও খড় খাওয়ানো নাইন্দা (মাটির বড় পাত্র) সরানো মাত্রই দেয়াল ভেঙ্গে লিয়ন ও মমিনের গায়ের উপরে পড়ে।

এসময় গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লিয়ন এবং মমিনকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুর রহমান তাদের অবস্থা বেগতিক দেখে রামেক হাসাপাতালে রেফার্ড করেন। তবে, গোয়াল ঘরে কোন আলো ছিল না।

অন্ধকারের মধ্যে তাদেরকে কাজে লাগান ওসমান ও ছেলে বাবুল। ওসমানের স্ত্রী বলেন, আমি গাভীর দুধ দুয়াচ্ছিলাম। চারজন শ্রমিক কাজ করছিল। তারা সবাই বারান্দায় ছিলেন।

কিন্তু দুজন বিশাল বড় নাইন্দা সরানো মাত্রই দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। মৃত্যুর খবর শুনেই বাকি দু শ্রমিক ও মালিকরা পালিয়ে যান। পরে অবশ্য আসেন।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, যে গোয়ালে কাজ করা হচ্ছিল সেখানে কাজ করার কোন পরিবেশ ছিল না। তারা নাইন্দা বা পানির পাত্র সরাবেন না এবং ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ভিতরে কাজ করতে চাননি।

কিন্তু ওসমান ও তার ছেলে সাব জানায় কাজ না করলে বকেয়া টাকা দেওয়া হবে না। বকেয়া টাকার জন্য জীবনের ঝুকি নিতে গিয়ে একজন মারা গেল অপর জন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল। এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য ওসমান ও তার ছেলে দায়ী, তাদেরকে আসামী করে জেলে দিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।

কুঠিপাড়াগ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, নিহত লিয়নের ছোট বাচ্চা আছে এবং স্ত্রীর পেটেও বাচ্চা আছে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটে না।

যে গোয়াল ঘরে কাজ করছিল সেখানে আলো নেই এবং প্রচুর ঝুকিপূর্ন অবস্থায় মাটির দেয়াল ছিলো। তাদের অনেক টাকা সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলবে।

তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, সার্কেল এএসপিসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি মর্মান্তিক। এঘটনায় নিহত মাহবুর রহমান লিয়নের মা জাহানারা বেগম বাদি হয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে